শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
No menu items!
বাড়িলাইফস্টাইলশীতে গর্ভবতী মায়ের যত্ন

শীতে গর্ভবতী মায়ের যত্ন

আর ঋতু বদলের এই সময়ে শীতকালে গর্ভবতী মায়েদের তো অতিরিক্ত যত্ন নিতেই হয়। তা ছাড়া এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের দরকার হয় বাড়তি সুরক্ষার। নইলে অল্পতেই সর্দি-কাশির কবলে পড়ে গর্ভের সন্তানটিও অসুস্থ হয়ে পড়ে। জন্ম থেকেই ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায় ভুগতে থাকে।
গর্ভকালীন সময় মায়েদের সবসময় থাকতে হয় একটু আলাদা যত্নে, একটু সাবধানে। সবসময় খেয়াল রাখতে হয়- যাতে করে মা বা সন্তানের কোনো রকমের সমস্যা না হয় এবং মা যাতে সুস্থ থাকতে পারেন। আর ঋতু বদলের এই সময়ে শীতকালে গর্ভবতী মায়েদের তো অতিরিক্ত যত্ন নিতেই হয়। তা ছাড়া এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের দরকার হয় বাড়তি সুরক্ষার। নইলে অল্পতেই সর্দি কাশির কবলে পড়ে গর্ভের সন্তানটিও অসুস্থ হয়ে পড়ে। জন্ম থেকেই ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায় ভুগতে থাকে। শীতে সাধারণত মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং প্রসূতি মায়েরা একটি বিশেষ অবস্থায় থাকেন তাই তাদের একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয়। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, নিউমোনিয়া হতে পারে মায়ের। যাদের হাপানির সমস্যা আছে তাদের হাপানির টান আরো বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও শীতকালে স্বাভাবিকভাবেই সবার ভেতর অলসতা চলে আসে- যার ফলে সাধারণ যেসব যত্নআত্তি গর্ভাবস্থায় নিতে হয় তাতেও ছেদ পড়ে। আজকে তাই এমন কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যাতে এ শীতে গর্ভবতী মা নিরাপদ থাকতে পারেন এবং শীতকালকে উপভোগ করতে পারেন। সুষম খাবার খান গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার একটু বেশিই খেতে হয়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে গর্ভের সন্তানের ওপরও। অর্থাৎ? এমন সময় মা যদি নিজের শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হয়, তবে নিজে যেমন সুস্থ থাকবে, তেমনি সুস্থ-সবল সন্তান জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ। শীতকালে বাজারে লাউ, শিম, মুলা, গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক, পালংশাক ইত্যাদি কমবেশি কিনতে পাওয়া যায়। গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিনই উলিস্নখিত খাবার কমবেশি খাওয়া উচিত। ভাত কম খেয়ে এসব বেশি খাওয়া জরুরি। তবে আলু একটু কম খাওয়া ভালো। কেননা, এতে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে। গর্ভকালীন সময়ে নারীদের শীতকালীন ফল যেমন কতবেল, জলপাই, কামরাঙা বড়ই, তেঁতুল ইত্যাদি (দেশি ফলও) স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি পরিমাণেই খাওয়া দরকার। আগে নানা মাধ্যমে শোনা যেত, তেঁতুল খেলে রক্ত জল হয়ে যায়। আর এখনকার চিকিৎসকরা বলে থাকেন, তেঁতুল নির্দিষ্ট পরিমাণে খেলে রক্তের সুস্থতা রক্ষা হয়। কতবেল, তেঁতুল, জলপাই ইত্যাদি টক ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। যেসব মায়ের সন্তানপ্রসব করানো হয় সার্জারির মাধ্যমে তাদের ইনফেকশনের ঝুঁকি অন্যান্যের তুলনায় একটু বেশিই থাকে। টক ফল এসব সমস্যা কমায়। টক ফল খেলে মুখের রুচি বৃদ্ধি পায়- যা শরীর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি একটি বিষয়। বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। পালংশাক, লালশাক, লাউশাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে- যা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমে। তাতে হজমশক্তি বাড়ে। আঁশ জাতীয় ফল ও শাকসবজিকে বলা হয়ে থাকে অন্ত্রপরিষ্কারক। তবে যাদের রক্তে ইউরিক-এসিডের মাত্রা বেশি তাদের পালংশাক ও লালশাক কম খাওয়া উচিত। ফুলকপি খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি মজাদার। কিডনি সমস্যা কমায় ফুলকপি। বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর ফসফরাস- যা শীতের সময়ে ঠান্ডার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। টমেটো ও টমেটোজাত খাদ্যে আছে লাইকোপেন। এ উপাদানও শরীর স্বাস্থ্য ভাল রাখে। শীতের শাকসবজি ও ফলমূল গর্ভবতী মায়ের ত্বক, চুল ইত্যাদির জন্যও উপকারী। হাইড্রেটেড থাকুন শীতকালে যেহেতু আমাদের ঘাম কম হয় এবং তৃষ্ণা কম লাগে তাই স্বভাবতই আমরা এ সময় জল কম খাই। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এমনটা করা উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় এমনিতেই স্বাভাবিকের চাইতে বেশি জল পান করা উচিত। শীতকালেও এর ব্যতিক্রম করা যাবে না। যদি আপনি জল খাওয়ার কথা ভুলে যান তবে আজকাল মোবাইলে অনেক অ্যাপস আছে যা আপনাকে সময় মতো জল পান করার রিমাইন্ডার দেবে। এ ছাড়াও আপনি হাতের কাছে সবসময় জল ভর্তি বোতল রাখতে পারেন যাতে যখনই বোতলটি দেখবেন তখনই আপনার জল খাওয়ার কথা মনে পড়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করলে ত্বকের শুষ্ক হয়ে যাওয়া, এমনকি ফ্লুইড কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা ও প্রি-টার্ম লেবারের মতো জটিলতার ঝুঁকি কমায়। ত্বকের যত্ন নিন দীর্ঘক্ষণ ধরে স্নান করবেন না কিংবা গরম জল ব্যবহার করবেন না। কারণ এগুলো ত্বকের শুষ্কতা আরো বাড়িয়ে তোলে। চেষ্টা করুন ৪-৫ মিনিটে স্নান শেষ করার এবং হালকা গরম জল ব্যবহার করুন। স্নানের পরে ত্বকে ভেজা ভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। হাতে, পায়ে, মুখে এবং পুরো শরীরে ময়েশ্চারাইজার মাখুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ময়েশ্চারাইজার মেখে ঘুমাতে যেতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ত্বক একেবারে শুকিয়ে নিয়ে তারপর ময়েশ্চারাইজার মাখলে কাজ হবে না। ত্বকে ভেজাভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে। শীতে স্নানের সময় সাবান কম ব্যবহার করাই ভালো। কারণ সাবান ত্বকে শুষ্কতা সৃষ্টি করে। সুতরাং স্নানে কিংবা হাত-মুখ ধুতে সাবান যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করবেন। এ সময় সাধারণত গিস্নসারিনসমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করাই উত্তম। শীতে ত্বকের শুষ্কভাব দূর করতে গিস্নসারিন কিংবা অলিভ অয়েল নিয়মিত মাখতে পারেন। গিস্নসারিন হলো সবচেয়ে ভালো ময়েশ্চারাইজার। একভাগ গিস্নসারিনের সঙ্গে দু’ভাগ জল মিশিয়ে ব্যবহার করুন। গিস্নসারিনের আঠা-আঠা ভাবটা দূর করার জন্য গিস্নসারিন মাখার পর একটা ভিজে তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে হালকা করে ত্বকে চেপে ধরলে আঠাভাব চলে যাবে। রোদে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ত্বকে সানস্ক্রিন ক্রিম মেখে বের হতে হবে। শীতের রোদ মিষ্টি আমেজ সৃষ্টি করলেও ত্বকের জন্য তা ক্ষতিকর। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের সমূহ ক্ষতি করে। ত্বকের ক্যান্সার ঘটা বিচিত্র কিছু নয়। তাই ত্বককে রক্ষা করতে হলে সানপ্রোটেকটিভ ফ্যাক্টর বা এসপিএফসমৃদ্ধ ক্রিম মেখে বের হওয়াই মঙ্গলজনক। বিভিন্ন মাত্রার এসপিএফসমৃদ্ধ ক্রিম বা লোশন রয়েছে। তবে গবেষকদের মতে এসপিএফ-১৫ সমৃদ্ধ ক্রিম ত্বকের জন্য নিরাপদ। শরীরের ত্বকের শুষ্কতার সঙ্গে পালস্না দিয়ে ঠোঁটের শুষ্কতা এ সময়ে মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। অনেকে এ সময়ে জিভ দিয়ে বারবার ঠোঁট ভেজাতে থাকেন, যা ঠোঁটের কোমল ত্বকের জন্য আরো ক্ষতি ডেকে আনে। সবচেয়ে ভালো হয়- ঠোঁটে বারবার ভেসলিন মাখলে। যদি ভেসিলিন শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, তাহলে গাঢ় করে ভেসলিন মাখতে হবে। ঠোঁটের ওপরিভাগের পাতলা শুষ্ক ত্বক কখনো টেনে তুলে আনার চেষ্টা করবেন না, তাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। নিয়মিত ম্যাসাজ করাতে পারেন। এর ফলে বস্নাড সার্কুলেশন ভালো থাকে- যা ত্বকের জন্য উপকারী। ব্যায়াম করুন শীতকালে আলসেমি ভর করে বলে অনেক ব্যায়াম করতে চান না এমনকি অনেকই শুয়ে বসে দিন কাটিয়ে দেন। এটা একেবারেই উচিত নয়। সকালে বা বিকালে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। ব্রীদিং টেকনিক ফলো করুন। এটি প্রসবের সময় কাজে দেবে। এ ছাড়াও মনকে শান্ত রাখার জন্য মেডিটেশন করতে পারেন। আরামদায়ক গরম পোশাক পড়ুন শীতের সোয়েটার কিংবা গরম কাপড় বাছাইয়ের দিকে মন দিন। এমন কিছু কেনা বা পরা যাবে না যাতে করে পেটের উপর চাপ পড়ে এবং চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। লম্বা এবং সামনের দিকে বোতাম আছে এমন সোয়েটারগুলো এই সময় গর্ভবতী মায়েদের আরাম দিতে পারে। শীতের কাপড় পরিধানের পাশাপাশি জুতার দিকে নজর দিতে ভুলবেন না যেন। পা থেকে ঠান্ডা লেগে আপনার এবং আপনার সন্তানের সমস্যা হতে পারে। তাই যাতে পা ভালোভাবে ঢাকা থাকে এমন জুতা পরবেন এবং ঘরে মোজা পরে থাকতে পারেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান এবং শীতকালীন উপসর্গ থেকে সুরক্ষিত থাকুন শীতকালে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আপনি শীত কমানোর ব্যবস্থা হয়তো করতে পারবেন না, কিন্তু নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক কিছুই করতে পারেন। নিয়মিত সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোওয়ার অভ্যাস করুন। এটা বিভিন্ন ইনফেকশনের ঝুঁকি কমাতে সবচাইতে সহজ ও কার্যকর উপায়। তাজা ফলফ্রুট এবং শাকসবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। জল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। তুলসি চা পান করুন। তুলসি কফ দূর করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত হালকা গরম জলে লবণ দিয়ে কুলি করুন। এতে গলার ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে। সর্দিকাশি যদি হয়েই যায় তবে তা নিরাময়ের ব্যবস্থা করুন অনেক গর্ভবতী মায়েরাই গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হবে ভেবে সর্দিকাশিতে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে যদি আপনার সর্দিকাশি দুতিন দিনের বেশি থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে এবং চিকিৎসা করাতে হবে। এসব সর্দিকাশি ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জারও লক্ষণ হতে পারে। প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছ থেকে ফ্লু শট সম্পর্কে জেনে নিয়ে তা নিতে পারেন। ডাক্তার আপনাকে গর্ভকালীন অবস্থায় নিরাপদ ওষুধই দেবেন। যদি মায়ের ঠান্ডার সমস্যা আগে থেকেই থাকে তবে ঠান্ডা জল ব্যবহারে এবং কোনো কিছু ঠান্ডা খেতে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়। কারণ মায়ের কিছু হলে তা থেকে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই কোনো ওষুধ সেবন করা ঠিক হবে না।
তথ্য সূত্রঃ যায়যায়দিন
সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মানবতার সেবায় কালিয়াকৈর গ্রুপ

টিভিতে আজকের খেলা