আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ৩৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ড. আবদুল মঈন খান বলেন, “বিগত তিনটি নির্বাচন ছিল প্রহসনের মতো। গত ১৫ বছরে যাদের কারণে দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা এক বছরে বদলে যাবে— এমন আশা করা ঠিক নয়। আমরা কমিশনকে সতর্ক করেছি, যেন বিগত বিতর্কিত কর্মকর্তারা এবার দায়িত্ব না পান।”তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, আগামী নির্বাচন একটি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যে শঙ্কা রয়েছে, তা কেটে যাবে।বিএনপি প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া।
১. নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।
২. মাঠ প্রশাসন—ডিসি, ইউএনও, এসপি, ওসি— সম্পূর্ণ পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
৩. ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের দায়িত্বে না রাখা।
৪. রিটার্নিং অফিসার হিসেবে সৎ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা নিয়োগ।
৫. প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে কমিশনের পূর্ণ ক্ষমতা।
৬. নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা প্রদান।
৭. ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন।
৮. প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় অভিযোগ নিষ্পত্তি কেন্দ্র স্থাপন।
৯. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন স্থগিতের দাবি।
১০. দলীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোলিং দায়িত্বে না রাখা।
১১. আন্দোলন-সংক্রান্ত গায়েবি মামলা প্রত্যাহার।
১২–১৪. অস্ত্র ও কালো টাকার প্রবাহ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা।
১৫. চুক্তিভিত্তিক রাজনৈতিক নিয়োগ বাতিল।
১৬–১৮. অবাধ ভোটাধিকার ও অর্থশক্তি-মুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত।
১৯. নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত প্রচারণা নিষিদ্ধ।
২০–২২. কমিশনের নিরপেক্ষতা, সাহসী ভূমিকা ও ভোটার নিরাপত্তা নিশ্চিত।
২৩–২৫. ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার রোধ।
২৬. অর্থ, দুর্নীতি ও সহিংসতামুক্ত (Triple C) নির্বাচন আয়োজন।
২৭–২৮. ভোটকেন্দ্র সহজলভ্য করা ও ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধি।
২৯. দায়িত্বে গাফিলতি হলে কর্মকর্তার তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার।
৩০. ৪০০ গজ ব্যসার্ধের বাইরেও সন্ত্রাস দমন।
৩১–৩৩. নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ও বাহিনী মোতায়েন নিশ্চিত।
৩৪. ছবিসহ ভোটার তালিকা সময়মতো সরবরাহ।
৩৫. ভোট গণনার পরপরই ফলাফল ঘোষণা।
৩৬. প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিত।
ড. মঈন খান বলেন, “জনগণ চায় এমন একটি নির্বাচন, যেখানে তাদের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। কমিশনের উচিত জনগণের সেই আস্থা ফিরিয়ে আনা।”