বাংলাদেশ না শ্রীলঙ্কা, কারা বেশি চাপে ছিল, কোন দলের সমর্থকদের রক্তচাপ বেশি ছিল?
এই উত্তর না হয় নাই জানা হলো। তবে এটি নিশ্চিত আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার জয়ে শ্রীলঙ্কার মানুষ যতটা খুশি, ততটুকু খুশি বাংলাদেশের মানুষও।
আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশকে নিয়েই এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পৌঁছে গেছে শ্রীলঙ্কা। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য শেষ পর্যন্ত হেলেছে শ্রীলঙ্কার দিকেই।। শেষ ওভারে মোহাম্মদ নবীর অমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পর হয়তো কমে গিয়েছিল বাংলাদেশের সুপার ফোরে খেলার সম্ভাবনা। কিন্তু কপালের আশায় বসে থাকা নাসুম আহমেদদের ভাগ্যে লেখা ছিল ভালো কিছুই।
অথচ ম্যাচের শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল কাজটা সহজই হবে শ্রীলঙ্কার জন্য। প্রথম দুই ওভারে ভালো শুরু পেলেও আফগানিস্তান প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে চাপেই ছিল ব্যাটিংয়ের সময়। অথচ ২ ওভারেই সব এলোমেলো হয়ে যায় । এলোমেলো করে দিয়েছিলেন আসলে মোহাম্মদ নবী। ১৮তম ওভার যখন শেষ হয়, তখনো আফগানিস্তানের রান ৭ উইকেটে ১২০। ১৫০–ও বেশ দূরের পথ মনে হচ্ছিল তখনো। অথচ একটু পরই বদলে যায় গল্প।
দুষ্মন্ত চামিরার ওভারে টানা তিন বলে বাউন্ডারিতে নেন ১৭ রান। ততক্ষণ অবধিও সব ঠিকঠাকই ছিল। রানটা না হয় দেড় শই হলো! কিন্তু দুনিত ভেল্লালাগের করা শেষ ওভারে যা হলো, তা এক কথায় অকল্পনীয়। প্রথম তিন বলেই ছক্কা। দিশেহারা ভেল্লালাগে পরের বলটা করেন নো বল।
ফ্রি হিট থেকে ছক্কা হাঁকানো নবী বল উড়িয়ে সীমানাছাড়া করেন পরের বলেও। ৫ ছক্কার এক ওভার থেকেই আসে ৩২ রান। পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট হারানোর পর পথহারা আফগানিস্তানকে দিশা খুঁজে দেন নবী। ২১ বলের হাফ সেঞ্চুরিতে নিজের নামও রেকর্ড বুকে তুলে নেন।
কীভাবে নেট রান রেট হিসাব করা হয়
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বয়সী হাফ সেঞ্চুরিয়ান ক্রিস গেইল। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১ বছর ২৯৪ দিন বয়সে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। আজ ৪০ বছর ২৬০ দিন বয়সে হাফ সেঞ্চুরি করে তাঁর ঠিক পরের নামটাই এখন নবীর। নবীর ঝড়েই আফগানিস্তান ইনিংস শেষ করে ৮ উইকেটে ১৬৯ রান তুলে।
শেষ ওভারে মোহাম্মদ নবী অমন হতবিহ্বল করে দেওয়ার পর শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি চাপে ছিল বাংলাদেশের সমর্থকেরাই। সুপার ফোরে উঠতে কী করতে হবে ততক্ষণে শ্রীলঙ্কা জেনে গেছে। ম্যাচ না জিতলেও ১০১ রান করলেই হয়। ১০০ রানের বেশি করে হারলেও আফগানিস্তানকে সঙ্গী করে সুপার ফোরে পৌছাত তারা, বাদ পড়ে যেত বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি ১০১ করেই সন্তুষ্ট থাকবে তারা্
সমীকরণটা মাথায় আছে, শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের শুরু থেকে একদমই তেমন মনে হয়নি। শুরু থেকেই দেখেশুনে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকে দলটি, ছুটতে থাকে জয়ের পথেই। প্রথম বলেই বাউন্ডারিও পেয়ে যায়। এরপর মাঝে মাঝে উইকেট হারালেও ওপেনার কুশল মেন্ডিস একপ্রান্তে থাকেন সাবলীল। পাতুম নিশাঙ্কার সঙ্গে তাঁর ১৪ বলের ওপেনিং জুটিতে আসে ২২ রান।
মাঝে কামিল মিশারা, কুশল পেরেরা আর আসালাঙ্কার সঙ্গে ছোট ছোট জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন। তবে কামিন্দু মেন্ডিস উইকেটে আসার পরই বদলে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট।
দুজনেই হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। ২৩ বলে কামিন্দু ও কুশলের ৫২ রানের জুটিতে ৮ বল হাতে রেখেই জয় পেয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। মুজিব উর রেহমানকে টানা দুই চার মেরে কুশল মেন্ডিসই এনে দেন জয়। এরপর চিৎকারে ফেটে পড়েন কুশল।
তাঁর সেই চিৎকারটা হয়তো তখন দুবাইয়ে বাংলাদেশের টিম হোটেলেও প্রতিধ্বনি তুলেছে। নিশ্চিতভাবেই আবুধাবির গ্যালারিতে বাংলাদেশের জার্সি পরে হাজির হওয়া দর্শকদের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেটের রাস্তায়ও। কোনো অঙ্ক কষা কিংবা হৃদয় ভাঙার গল্প নয়, বাংলাদেশ যে সুপার ফোরে যাচ্ছে এক জয় পাওয়া আফগানিস্তান থেকে পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই।
তবে তাঁদের আবার শুরু করতে হবে শূন্য থেকেই। সেই শুরুটা করতে হচ্ছে তাঁদের সুপার ফোরে তুলে দেওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শনিবার দুবাইয়েই। বাকি দুটি ২৪ সেপ্টেম্বর ভারত আর পরদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে। তখন যেন ফাইনালে যেতে কোনো অঙ্ক কষতে না হয়, ক্রিকেটারদের সঙ্গে দর্শকদেরও চাওয়া নিশ্চিতভাবেই থাকবে সেটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৬৯/৮ (নবী ৬০, জাদরান ২৪, রশিদ ২৪, আতাল ১৮, গুরবাজ ১৪; তুষারা ৪/১৮, শানাকা ১/২৯, ভেল্লালাগে ১/৪৯, চামিরা ১/৫০)। শ্রীলঙ্কা: ১৮.৪ ওভারে ১৭১/৪ (কুশল মেন্ডিস ৭৪*, কুশল পেরেরা ২৮, কামিন্দু মেন্ডিস ২৬*, আসালাঙ্কা ১৭; ওমরজাই ১/১০, নবী ১/২০, নুর ১/৩৭, মুজিব ১/৪২)। ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কুশল মেন্ডিস