সকালের সূর্য নাকি দিনের পূর্বাভাস দেয়। তেমনই ফুটবলের ভবিষ্যৎ কয়েকজন তারকাকে কি দেখা গেল এবারের ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে?
এই মঞ্চ থেকেই তো আলো ছড়াতে শুরু করেছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা, রোনালদিনিও, লিওনেল মেসি, সের্হিও আগুয়েরো, পল পগবা, আর্লিং হলান্ডদের মতো তারকারা।
গতকাল মরক্কোর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হওয়া ২০২৫ আসরও দিয়েছে নতুন কিছু নাম। এমন কিছু ফুটবলার উঠে এসেছেন, যাঁরা একক নৈপুণ্যে বদলে দিয়েছেন ম্যাচের গতিপথ। সবার দল সাফল্য না পেলেও ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা তাঁরা ঠিকই সঙ্গে নিয়ে গেছেন। পড়ুন সে রকম ৭ তরুণ ফুটবলারের গল্প।
হুলিও সোলের (আর্জেন্টিনা)
জন্ম প্যারাগুয়েতে, কিন্তু বেড়ে উঠেছেন আর্জেন্টিনায়। জন্মভূমি ছেড়ে আর্জেন্টিনার হয়েই খেলার সিদ্ধান্ত নেন। গত বছর খেলেছেন প্যারিস অলিম্পিকে। এবার তাঁর নেতৃত্বেই ১৮ বছর পর অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠ-রক্ষণভাগ দুই জায়গাতেই সমান পারদর্শী। এই আসরে বেশির ভাগ ম্যাচে খেলেছেন মিডফিল্ডার হিসেবে। তাঁর ড্রিবলিং দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতা ফুটবলপ্রেমীদের নজর কেড়েছে। তরুণ এই প্রতিভাকে এ বছর দলে ভিড়িয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব বোর্নমাউথ। অদূর ভবিষ্যতে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলেরও অন্যতম ভরসা হয়ে উঠতে পারেন তিনি।
সান্তিনো বারবি (আর্জেন্টিনা)
খেলেন স্বদেশি ক্লাব তায়েরেসের বয়সভিত্তিক দলে। আসর শুরুর আগে তিনি খুব বেশি আলোচনায় ছিলেন না। সেই তিনিই টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার হওয়ার সুবাদে জিতলেন গোল্ডেন গ্লাভ! শুরু আর শেষটাই যা একটু খারাপ হয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচে ২ গোলের পর কাল ফাইনালেও হজম করেছেন ২ গোল। তবে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে আছে ক্লিনশিট (কোনো গোল খাননি)। এমন পারফরম্যান্স দেখে থাকলে বড় ক্লাবগুলো শিগগিরই তাঁর দিকে হাত বাড়াতে পারে।
বেঞ্জামিন ক্রেমাস্কি (যুক্তরাষ্ট্র)
যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, ইতালি—তিন দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। শেষ পর্যন্ত জাতীয় দল হিসেবে বেছে নিয়েছেন জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্রকে। লিওনেল মেসি-লুইস সুয়ারেজদের সতীর্থ হিসেবে খেলতেন ইন্টার মায়ামিতে। কিন্তু কোচ হাভিয়ের মাচেরানো তাঁকে পর্যাপ্ত খেলার সুযোগ না দেওয়ায় গত সেপ্টেম্বরে ধারে চলে যান ইতালিয়ান ক্লাব পার্মায়। অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে তাঁর পারফরম্যান্স দেখে মাচেরানো একটু অনুতপ্ত হতেই পারেন। বেঞ্জামিন ক্রেমাস্কি যে আসরে সর্বোচ্চ ৫ গোল ও ২ অ্যাসিস্ট করে গোল্ডেন বুট জিতে নিয়েছেন! ছন্দটা ধরে রাখতে পারলে ঘরের মাঠে ২০২৬ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন তিনি।
নেইসের ভিয়ারিয়াল (কলম্বিয়া)
ড্রিবলিং দক্ষতা, বলের নিয়ন্ত্রণ ও দূরপাল্লার শটে পারদর্শী নেইসের ভিয়ারিয়ালকে এবারের আসরের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় মনে করা হচ্ছিল। তবে তিনি এতটা ভালো খেলবেন, হয়তো তা অনেকেই ভাবেননি। ফেবারিট না হয়েও কলম্বিয়া যে তৃতীয় হয়েছে, তাতে বড় অবদান এই ফরোয়ার্ডের। নিজে করেছেন ৫ গোল, সতীর্থকে দিয়ে করিয়েছেন ১টি। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট স্পেন তাঁর হ্যাটট্রিকেই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ে। তিনি জিতেছেন সিলভার বুট।
লুকাস মিশাল (ফ্রান্স)
টুর্নামেন্টে আলো ছড়ানো আরেক তরুণ লুকাস মিশাল। ৫ গোল করে তিনি জিতেছেন ব্রোঞ্জ বল। এএস মোনাকোর এই ফরোয়ার্ড ফ্রান্সকে সেমিফাইনালে তুলতে বড় অবদান রেখেছেন। নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিপক্ষে বদলি নেমে জোড়া গোল করেছিলেন। সেই ম্যাচে পুরোটা সময় খেললে হয়তো তিনিই গোল্ডেন বুট জিততেন।
ইয়াসির জাবিরি (মরক্কো)
আসরের আরেক বিস্ময় ইয়াসির জাবিরি। পর্তুগিজ ক্লাব ফামালিকাউয়ের এই ফরোয়ার্ডের জোড়া গোলেই কাল আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মরক্কো। টুর্নামেন্টে ৫ গোলের পাশাপাশি একটি অ্যাসিস্ট করেছেন জাবিরি। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স পুরস্কার হিসেবে জিতেছেন সিলভার বল। ফাইনালে সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে করা গোলটা অনেক দিন ফুটবলপ্রেমীদের চোখে লেগে থাকার কথা। এরই মধ্যে বড় ক্লাবগুলোরও সুনজরে পড়ার কথা তাঁর।
ওথমান মাম্মা (মরক্কো)
এবারের আসরের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ওথমান মাম্মা। মরক্কোর এই উইঙ্গার টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার হিসেবে জিতেছেন গোল্ডেন বল। আসরে চারটি গোলে বল বানিয়ে দিয়েছেন, গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে প্রথম গোলটা তিনিই করেছেন। কাল ফাইনালেও চিতার বেগে বক্সে ঢুকে আর্জেন্টিনার এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জাবিরিকে ক্রস বাড়িয়েছেন, যা থেকে মরক্কোর দ্বিতীয় গোলটা এসেছে। দীর্ঘদেহী এই ফুটবলার সর্বশেষ গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ফরাসি ক্লাব মঁপেলিয়ে ছেড়ে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপের ক্লাব ওয়াটফোর্ডে নাম লিখিয়েছেন। আগামী শীতকালীন দলবদলেই হয়তো তাঁর দিকে হাত বাড়াবে প্রিমিয়ার লিগের কোনো ক্লাব।