১২ বছর পর আবার অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়া (ওসিএ) ইয়ুথ এশিয়ান গেমস আয়োজন করছে। এই গেমসে বাংলাদেশ ১৩ ডিসিপ্লিনে ৬০ জন ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করছেন। প্রথম দুই যুব এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ কোনো পদক পায়নি। তবে এবার বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন কাবাডি, গলফ, কুস্তি ও ভারত্তোলনে পদকের আশা করছে। ২০০৯ সালে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ ৪ ও ২০১৩ সালে চীনের নানজিংয়ে দ্বিতীয় আসরে ৮ ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়েও পদক শূন্য ছিল বাংলাদেশ।
গেমসে অংশগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নারী ও কাবাডি দল বাহরাইন পৌঁছেছে। আজ গেমস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে। বিওএ নির্বাহী সদস্য ও বাহরাইন ৩য় যুব এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ দলের শেফ দ্য মিশন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ন কবীর বাংলাদেশের পদক জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, ‘এই গেমসে ৪৫ দেশ অংশগ্রহণ করলেও কাবাডিতে একটি ইভেন্টে ৭ আরেক ইভেন্টে ৫টি দেশ অংশগ্রহণ করছে। ফলে আমরা কাবাডিতে পদক জয়ের ব্যাপারে বাস্তবিকভাবেই আশাবাদী। এছাড়া কুস্তি, গলফ ও ভারত্তোলন নিয়েও ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি।’
দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে আন্তর্জাতিক গেমসে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই। অংশগ্রহণ এবং জাতীয় প্রতিযোগিতার চেয়ে ভালো ফলাফলই মূলত সন্তুষ্টি। আন্তর্জাতিক গেমসে পদক না আসলেও অনেক সময় খেলোয়াড়রা সময়মতো ভেন্যুতে উপস্থিত হতে পারেন না। ম্যানেজার নির্দিষ্ট সভায় অংশগ্রহণ না করায় খেলোয়াড় খেলতে না পারার ঘটনা ঘটেছে বিগত সময়ে। ফলে গেমসে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয় বাংলাদেশ। এই গেমসে এ রকম কিছু না হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে শেফ দ্য মিশন বলেন, ‘আমরা অবশ্যই পদকের জন্য চেষ্টা করব। পদক জিততে না পারলেও কোনো শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ হবে না সেটার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা টিম ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অন্তত আটটি মিটিং করেছি। যার যার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন এছাড়া সামগ্রিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে। এরপরও যদি কোনো ব্যক্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন সেটার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করা হবে।’
গেমসে যাওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন কর্মকর্তারা। খেলে আসার পর আর সেভাবে জবাবদিহিতা হয় না। শেফ দ্য মিশন সেই ধারাও পরিবর্তন করতে চান, ‘এখন যেমন সংবাদ সম্মেলন হচ্ছে আমার ইচ্ছে রয়েছে গেমসের পর আরেকটি পর্যালোচনামূলক সংবাদ সম্মেলন হওয়ার। সংবাদ সম্মেলন না হলেও অবশ্যই যে ফেডারেশনের খেলোয়াড়রা যাচ্ছেন তাদের সঙ্গে একটি রিভিউ মিটিং অবশ্যই হবে। সরকারের অর্থ ব্যয় হচ্ছে এর একটা জবাবদিহিতা থাকা উচিত।’
ইয়ুথ এশিয়ান গেমসে ১৪-১৮ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা অংশগ্রহণ করছেন। বাহরাইনে ২৫ ডিসিপ্লিনের মধ্যে বাংলাদেশ মাত্র ১৩ ডিসিপ্লিনে অংশগ্রহণ করছে। বাকি ডিসিপ্লিনে অংশগ্রহণ না করার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেফাউল কবীর বলেন, ‘নির্বাহী কমিটির সভায় ডিসিপ্লিনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফেডারেশনের আগ্রহ ও সম্ভাবনার ভিত্তিতেই ডিসিপ্লিন ঠিক হয়।’
৮১ জন কন্টিনজেন্টের মধ্যে পুরুষ খেলোয়াড় ৩৬ জন, নারী খেলোয়াড় ২৪ জন, পুরুষ প্রশিক্ষক ১৬ জন ও মহিলা প্রশিক্ষক ৫ জন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের সাফল্য অনেক। পুরুষ প্রশিক্ষক/কর্মকর্তা অনুপাতে নারী প্রশিক্ষক/কর্মকর্তা তিন ভাগের এক ভাগ। এ নিয়ে বিওএ কোষাধ্যক্ষ একে সরকার বলেন, ‘কোচ-কর্মকর্তার বিষয়টি ফেডারেশনই ঠিক করে। অনেক ফেডারেশনে যোগ্য-অভিজ্ঞ নারী কোচ-প্রশিক্ষক কম। হয়তো এজন্য তারা নারীদের নাম দিতে পারেনি। আবার আমাদের পক্ষেও কন্টিনজেন্ট বড় করা যায় না। কারণ স্বাগতিকদের গাইডলাইন ও খরচের বিষয় থাকে।’
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যুব এশিয়ান গেমসের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছে। যাতায়াত, বাহরাইনে আবাসন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বিওএ ৬ কোটি টাকা বাজেট করেছিল। সেটা ২ কোটি টাকার একটু বেশি সরকার থেকে অনুমোদন হয়েছে। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন এই অর্থ ব্যয় করলেও পরবর্তীতে সরকার থেকে গ্রহণ করবে।
তৃতীয় যুব এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের ডিসিপ্লিনসমূহ:
অ্যাথলেটিক্স (২ পুরুষ), ব্যাডমিন্টন (১ পুরুষ ও ১ নারী ), বক্সিং (৪ পুরুষ), বাস্কেটবল (থ্রি অন থ্রি) (৪ পুরুষ), সাইক্লিং (২ পুরুষ), গলফ (২পুরুষ), জুডো (১পুরুষ, ১নারী), কাবাডি (১৪ পুরুষ, ১৪ নারী), সাঁতার (১ পুরুষ, ১নারী), টেবিল টেনিস (২ পুরুষ, ২ নারী), তায়কোয়ানডো (১পুরুষ, ১ নারী), ভারত্তোলন (২পুরুষ, ২ নারী), কুস্তি (২ নারী)।