বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে এখন একঝাঁক তরুণ ও নবীন ব্যাটার। অধিনায়ক মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত আর তাওহিদ হৃদয় ছাড়া আর কারো ৩০টি ম্যাচও খেলার অভিজ্ঞতা নেই। বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান নাজমুল আবেদিন ফাহিমের ধারনা ও বিশ্বাস, এ তরুণরা কিছুটা পরিণত হলেই এ সংকট কেটে যাবে। আবার বাংলাদেশের ওয়ানডে ব্যাটিংয়ে মিলবে নৈপুণ্যের দ্যুতি।
ফাহিম মনে করেন, এখন বাংলাদেশের তরুণ ও নবীন ব্যাটাররা যে পথে হাঁটছেন, এক সময় সাকিব, মুশফিক আর রিয়াদদেরও কিন্তু ওই পথে হাঁটতে হয়েছে এবং তারাও একদিন নবীন ও তরুণ ছিলেন। খেলে খেলে পরিণত ও অভিজ্ঞ হয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে শিখেছেন।
আপনার কি মনে হয় দলে সাকিব, মুশফিক ও রিয়াদের মত অভিজ্ঞ পারফরমারে ঘাটতি আছে? তারা না থাকায় ব্যাটিংয়ের এ করুণ অবস্থা? ফাহিমের ব্যাখ্যা, ‘এটা সত্য যে- সাকিব, মুশফিক ও রিয়াদরা সব সময় থাকবেন না। কাজেই তাদের ছাড়া এক সময় না এক সময় খেলতেই হতো। এখন যেমন খেলতে হচ্ছে। আমাদের দলে কিছু নতুন খেলোয়াড় আছে, যাদের সেই এক্সপেরিয়েন্স এখন নেই। তারা এখনো জানে না, বোঝে না কখন কি করতে হবে? তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’
‘তবে তাতে হতাশায় ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দরের আরও ভাল করার মত সামর্থ্য আছে। তবে কিছুটা সময় প্রয়োজন। আমার বিশ্বাস, সামনে যত সময় গড়াবে, এই তরুণরাই দেখবেন ধীরে ধীরে সংকটে, বিপদে এবং দলের প্রয়োজনে শক্ত হাতে হাল ধরতে শিখে যাবে।’
ফাহিম বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘সময়ই তাদের পরিণত করবে। দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বাড়ানোর পাশাপাশি কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সামর্থ্য বাড়াতে সহায়তা করবে।
সাকিব, মুশফিক ও রিয়াদের উপমা টেনে ফাহিম বলেন, এখন আমাদের তরুণরা যে পথে হাঁটছে, ভুলে গেলে চলবে না যে- সাকিব, মুশফিক আর রিয়াদরাও এক সময় ঠিক ওই পথেই হেঁটেছে। তাদেরও ওই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তারাও কিন্তু একদিনে অত ওপরে ওঠেনি। রাতারাতি দল জেতাতে শেখেনি। ধীরে ধীরে ওই কঠিন ও বন্ধুর পথ পার হতে শিখেছে। তারাও খেলে খেলেই জেনেছে, সেই পথ পার হতে হয় কিভাবে? সংকট, বিপদ কাটিয়ে উঠতে করণীয় কি? মুশফিক, সাকিব ও রিয়াদরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েই জেনেছে। শিখেছে।’
‘তারাও এক সময় জেনেছে কিভাবে পরিস্থিতি পার হতে হয়। শুরুর দিকে তাদেরও কষ্ট হয়েছে। তারাও ওই বিপদের পাহাড় বেয়ে উঠতে গিয়ে পড়ে গেছে। পরে একটা সময় যখন ম্যাচে এমন সিচ্যুয়েশন এসেছে, তখন তারা তাদের সেই অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই তা ওভারকাম করে দেখিয়েছে।’
‘বাংলাদেশের বর্তমান দলের তরুণদের সেই রকম অভিজ্ঞতা হয়নি। তারা টাফ সিচ্যুয়েশনের মধ্যে পড়ে পড়ে সংকট ও বিপদ কাটানোর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেনি। তারা স্পেশালি ওয়ানডে ক্রিকেটে তত অভিজ্ঞ না। ওয়ানডে ক্রিকেটে ক্রাইসিসে যেভাবে খেলতে হয় সেটা তাদের খুব ভাল জানা নেই।’
ফাহিমের কথার পক্ষে যুক্তি ও দলিল হিসেবে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার উপমা টানাই যায়। ইনজামাম উল হক, মোহাম্মদ ইউসুফ, ইউনুস খান ও মিসবাহ-উল হকরা অবসরে যাওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। বাবর আজম ছাড়া সে অর্থে কোয়ালিটি ব্যাটার আসেনি। তাই এখন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের হতচ্ছিরি অবস্থা। একই কথা খাটে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে। কুমারা সাঙ্গাকারা আর মাহেলা জয়াবর্ধনে অবসরে যাওয়ার পরও একটা সংকট তৈরি হয়েছে। এখনো সে সংকট কাটেনি লঙ্কানদের।
এখন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এই বিরাজমান সংকট কাটাতে কত দিন লাগে, কে জানে!