একটা করে ডট বল হয়, গ্যালারি থেকে ভেসে আসে মৃদু উল্লাস। উইকেট পড়লে তো কথাই নেই, গর্জে ওঠেন দর্শক। মাঠে তখন অঙ্কের খেলা—সমীকরণ মিলছে না, মিলছে আবার!
শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে ভাগ্যটা তুলে দেওয়া হয়েছিল অন্যদের হাতে। সেটা এখনো বদলানো যায়নি। কিন্তু তাতে ম্যাচ জয়ের স্বস্তি কি এতটুকুও কমে? আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আজ আফগানিস্তানকে ৮ রানে হারিয়ে অন্তত নিজেদের কাজটা তো ঠিকঠাক করে রাখা গেল।
এখন হিসাবটা এমন—শ্রীলঙ্কা যদি বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানকে হারায়, তাহলে বাংলাদেশকে আর কোনো অঙ্ক কষতে হবে না। আর যদি আফগানিস্তান জেতে, তাহলে ওদের সেই জয়টা যেন হয় একটু বড় ব্যবধানে—বাংলাদেশের চাওয়া এটাই।
এই অঙ্ক কষার অভ্যাস বাংলাদেশের নতুন নয় যদিও। এই ম্যাচের আগেও তো কত অঙ্ক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে কখনো দেশের বাইরে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে হংকংকে হারিয়ে দেওয়ার আত্মবিশ্বাস তাদের। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অতৃপ্তির জয়ের পর শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আপাতত সেখান থেকে কিছুটা হলেও তো ফিরে আসা গেছে।
কাল একাদশে চার পরিবর্তনের মধ্যে রিশাদের সঙ্গে দলে ফিরেছিলেন নাসুম আহমেদ। সেটাই হয়ে গেল মাস্টারস্ট্রোক। বাংলাদেশ ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলে ফেলেছিল ৫৯ রান। মাঝবিরতিতে বাংলাদেশের ১৫৫ রানের সংগ্রহটা তখন সন্দেহে ঝুলছিল—একটু কম হয়ে গেল না তো?
কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম বলেই নাসুম আউট করলেন সাদিকুল্লাহ আতালকে। শুধু তা–ই নয়, পুরো ওভারটা গেল মেডেন! সেই চাপ থেকে আর উঠতেই পারল না আফগানিস্তান। পঞ্চম বোলারের ঘাটতি পূরণে সাইফ হাসান ও শামীম হোসেনের করা ৪ ওভারে ৫৫ রান নিয়ে যে মিটিমিটি আলো জ্বালিয়েছিল তারা, তা শেষ পর্যন্ত জ্বলে থাকেনি বাংলাদেশের নিয়মিত বোলাররা ভালো করায়।
যদিও তাসকিনের বলে ইব্রাহিম জাদরানের ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন রিশাদ। কিন্তু ৩ ওভারে ৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া নাসুমের দুর্দান্ত স্পেল দ্রুতই ভুলিয়ে দিল সেই দুঃখ। হাল ধরার চেষ্টা করা ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়েছেন সেই রিশাদ হোসেনই। তাঁর বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩১ বলে ৩৫ রান করে গেছেন গুরবাজ।
পরে আজমতউল্লাহ ওমরজাই একটু ভয় ধরান—সাইফ হাসানের করা ১৪তম ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে নেন ২০ রান। কিন্তু তাসকিন আহমেদের বলে সাইফের দুর্দান্ত ক্যাচে থেমে যায় তাঁর ১৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস। প্রায় শেষ হয়ে যায় আফগানিস্তানের আশাও। শেষে রশিদ খানের ১১ বলে ২০ রান শুধু হারের ব্যবধানটা কিছুটা কমিয়েছে।
এমন একটা জয়ের ভিত বাংলাদেশকে গড়ে দিয়েছিলেন আসলে তানজিদ হাসান। সাইফের সঙ্গে তাঁর উদ্বোধনী জুটি ছিল ৪০ বলে ৬৩ রানের। ৩১ বলের ইনিংসে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৫২ রান করে তানজিদ পেয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি। যদিও এমন মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েও বাংলাদেশ রানটা ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যেতে পারেনি।
কীভাবে নেট রান রেট হিসাব করা হয়, সুপার ফোরে উঠতে বাংলাদেশের হিসাব কী
প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৮৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরের ১০ ওভারে তাওহীদ হৃদয়-জাকের আলী-শামীম হোসেনদের ব্যর্থতায় আসে মাত্র ৬৭ রান। ১৩ বল খেলে অপরাজিত থাকা জাকের ১২ আর শামীম ১১ বলে করেন ১১ রান। তবু যে রানটা বাংলাদেশ পেয়েছে, তাই জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়েছে।
তৃপ্তির হাসি নিয়ে আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম ছেড়েছেন দর্শকেরা। মরুর পথ ধরে তাঁরা গাড়ি নিয়ে গন্তব্যে ছুটতে ছুটতে হয় খুঁজবেন সুপার ফোরে যাওয়ার সমীকরণটাও। সেখানে দুশ্চিন্তা ভর করবে, ভয়ও। কে হারলে কী হবে, এই জটিল হিসাবের মারপ্যাঁচে হয়তো ভুলে যেতে হবে ম্যাচ জয়ের আনন্দ।
মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচ বলেই বেশি আশা বাংলাদেশের
তবু যে দলটা সমীকরণ মিলিয়ে জিততে জানে, তাদের ওপর বাংলাদেশ দলের মুশতাক আহমেদের ভাষায় ‘বিশ্বাস’টাও নিশ্চয়ই রাখবেন তাঁরা! বাংলাদেশ কি এখন বাড়ির পথ ধরবে নাকি সুপার ফোরের ম্যাচ খেলতে যাবে দুবাই? সে জন্য কাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আপাতত আর উপায় নেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৪/৫ (তানজিদ ৫২, সাইফ ৩০, হৃদয় ২৬, জাকের ১২*, নুরুল ১২*, শামীম ১১; নুর ২/২৩, রশিদ ২/২৬)।
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৬ (গুরবাজ ৩৫, ওমরজাই ৩০, রশিদ ২০, নাইব ১৬; মোস্তাফিজ ৩/২৮, নাসুম ২/১১, রশিদ ২/১৮, তাসকিন ২/৩৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাসুম আহমেদ