বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৬, ২০২৫
No menu items!
বাড়িরাজনীতিপিআর দাবি নিয়ে কতদূর যাবে ইসলামি দলগুলো?

পিআর দাবি নিয়ে কতদূর যাবে ইসলামি দলগুলো?

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচন কমিশনও সেই সময়ে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এখন রাজনীতির মাঠে সবচেয়ে আলোচনা চলছে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর দাবিতে আন্দোলন করছে সাতটি ইসলামি দল।

পিআর-সহ পাঁচ দফা দাবিতে তারা রাজধানী থেকে শুরু করে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করছে। তবে এ দাবি নিয়ে কতদূর যেতে পারবে এসব দল, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে সংশয়। যদিও স্বাধীনতার পর দেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন কখনো পিআর পদ্ধতিতে হয়নি।

যদিও ইসলামি দলগুলোর বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অবস্থান এ নিয়ে ভিন্ন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের কেউ কেউ সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর সমর্থন করলেও, নিম্নকক্ষে এই প্রক্রিয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে দল দুটি আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসসহ যুগপৎ আন্দোলন করা দলগুলোর নেতারা  জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে একইভাবে চলছে, অথচ বিশ্বের অনেক দেশে নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, সেটি কার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় জনগণের আস্থা তৈরি হয়েছিল। তাই এখন নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কারের দাবিও জোরালো হচ্ছে।

তারা বলছেন, সংস্কার বা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না হলে নির্বাচনের পরে তা বাস্তবায়ন করা হবে কি না, সেই সন্দেহ রয়েছে। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকায় অতীতে নানা রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল। অথচ তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি থাকাকালীন সময়ে নির্বাচন তুলনামূলক শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পিআর সিস্টেমই হলো ফ্যাসিবাদ ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম  বলেন, ‘নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। ইসলামি দলগুলোর বাইরে অন্য দলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। কর্মসূচিতে না আসলেও তাদের সঙ্গে আলাপ চলছে আমাদের। অন্যান্য দল জুলাই সনদ ও উচ্চকক্ষে পিআর-এর বিষয়ে এক। তারাও তাদের দলের মধ্যে আলোচনা করছে। এসব ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আমাদের চিন্তার ঐক্য আছে, কর্মসূচির ঐক্য এখনো হয়নি।’

মাওলানা আব্দুল হালিম আরও বলেন, সব দল একভাবে পিআর সিস্টেম চাচ্ছে না, তবে অধিকাংশের অবস্থান এক। বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে। কেউ কেউ আন্দোলনে নামতে দেরি করছে, তবে তারা দাবি থেকে সরে যায়নি।

পিআর দাবি নিয়ে নানা আলোচনা আছে। এই দাবি নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে লোক আছে। সবার স্বার্থ আছে, সবাই নিজের অবস্থান জানাচ্ছে। এটা একান্তই তাদের (রাজনৈতিক দল) ব্যাপার। তারা আন্দোলন করে কতটা সফল হবে, এটা আমাদের বলার বিষয় না। -বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনূস আহমেদ  বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে পিআর দাবি জানিয়ে আসছি। এটা জনগণের দাবি। আমরা আমাদের লক্ষ্যেই আছি। ২৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা পর্যায়ে আমাদের আন্দোলন শেষে নতুন কর্মসূচি আসবে। পিআরসহ ৫ দাবি নিয়ে যারা আন্দোলন করছি, সবাই এক সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নেব।

পিআর নিয়ে একাট্টা নয় দুই ইসলামিক দল

পিআর দাবি ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিকে সামনে রেখে ইসলামি দলগুলো আন্দোলন করলেও কওমি ঘরানার কয়েকটি দলের মধ্যে সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর দাবির বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ  বলেন, ‘আমাদের এক নম্বর দাবি হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন। দৃশ্যমান বিচার করা। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হলো আমাদের মূল দাবি। আর আমরা উচ্চকক্ষে পিআর চাচ্ছি। নিম্নকক্ষেও আমরা পিআর-এর বিরুদ্ধে না, নিম্নকক্ষে পিআর হলেও সমস্যা নেই। তবে এটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। এছাড়া পিআর আমাদের একমাত্র দাবি না।’

আমাদের আন্দোলনের মূল কথা হলো, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি তৈরি ও বাস্তবায়ন করা এবং নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। এরপর সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তবে আমরা ইসলামি দলগুলো একসঙ্গে বসে পরবর্তী কর্মসূচি দেব।-অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন

মাওলানা জালালুদ্দীন বলেন, উচ্চকক্ষে পিআর দাবি ঐকমত্য কমিশনে পাস হয়েছে। কিন্তু বিএনপি এখানে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়েছে। উচ্চকক্ষে পিআর একেবারে সহজ বিষয়। এটা হওয়া জরুরি।

খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন  বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলি, নিম্নকক্ষে পিআর চাই না, আবার উচ্চকক্ষও পিআর ছাড়া চাই না। যদি পিআর থাকে, তবে আমরা উচ্চকক্ষ মেনে নিতে রাজি আছি। না হলে সংসদে উচ্চকক্ষের দরকার নেই।’

অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের মূল কথা হলো, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি তৈরি ও বাস্তবায়ন করা এবং নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। এরপর সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তবে আমরা ইসলামি দলগুলো একসঙ্গে বসে পরবর্তী কর্মসূচি দেব।’

খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর বলেন, আশা করবো নির্বাচনের আগেই একটি চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়া এবং তার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার। যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা যায়।

অন্যদিকে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি শুরু থেকেই পিআর ব্যবস্থার বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, এটি আসলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পেছানোর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। বিএনপির নেতারা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পিআর চালু করা সম্ভব নয় এবং এটি জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের পথে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করবে।

নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। ইসলামি দলগুলোর বাইরে অন্য দলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। কর্মসূচিতে না আসলেও তাদের সঙ্গে আলাপ চলছে আমাদের। অন্যান্য দল জুলাই সনদ ও উচ্চকক্ষে পিআর-এর বিষয়ে এক। তারাও তাদের দলের মধ্যে আলোচনা করছে। এসব ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আমাদের চিন্তার ঐক্য আছে, কর্মসূচির ঐক্য এখনো হয়নি।-মাওলানা আব্দুল হালিম

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, পিআর দাবি নিয়ে নানা আলোচনা আছে। এই দাবি নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে লোক আছে। সবার স্বার্থ আছে, সবাই নিজের অবস্থান জানাচ্ছে। এটা একান্তই তাদের (রাজনৈতিক দল) ব্যাপার। তারা আন্দোলন করে কতটা সফল হবে, এটা আমাদের বলার বিষয় না।

তিনি বলেন, নির্বাচন পদ্ধতি দুটিরই ত্রুটি আছে, আবার ভালো দিকও আছে। নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশন শুধু উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করার প্রস্তাব করেছে। যদিও সেখানে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে।

বর্তমানে দেশে ‘ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট’ ভোটদান পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই পদ্ধতিতে একটি আসনে যে দলের প্রার্থী অন্যদের চেয়ে বেশি ভোট পান সেই দলের প্রার্থী জয়ী হন। একইভাবে যে দলের প্রার্থী বেশি আসন পান, সেই দল সরকার গঠন করে। বিগত নির্বাচনগুলোতে এভাবেই ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে।

অন্যদিকে পিআর হলো এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা, যেখানে কোনো একটি রাজনৈতিক দল সারাদেশে মোট যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদেও তারা ঠিক তত শতাংশ আসন পাবে।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ