ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট বানচালের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “আমরা কোনো অবস্থাতেই এই ধরনের ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেব না। আঘাত যা–ই আসুক, যত ঝড়–তুফান আসুক, কোনো শক্তিই আগামী নির্বাচনকে বানচাল করতে পারবে না।”
শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালে শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা একটি গভীরভাবে উদ্বেগজনক ঘটনা। এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার ওপর সরাসরি ও সুপরিকল্পিত আঘাত। এর মাধ্যমে পরাজিত শক্তি দেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের হামলার যেকোনো চেষ্টাকে আমরা কঠোরভাবে ব্যর্থ করে দেব। জাতির ওপর অপশক্তির এই আঘাত কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। দেশের আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করব।”
জরুরি বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানসহ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীরা এবং পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান জানান, ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। পরিবারের ইচ্ছায় তাঁকে ইতোমধ্যে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়ে বলেন, “যে করেই হোক, দ্রুততম সময়ের মধ্যে হামলাকারী ও হামলার নেপথ্যে জড়িত পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।” তিনি দেশবাসীর কাছে ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া কামনা করেন।
পুলিশ জানায়, হামলার স্থানের সিসিটিভি ফুটেজসহ প্রয়োজনীয় আলামত ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা সীমান্তে তাৎক্ষণিক ও কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়ে বলেন, “হামলাকারীরা যাতে কোনোভাবেই দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
বৈঠকে আরও বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা সম্ভাব্য ঝুঁকিতে থাকতে পারেন—এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাঁদের নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
এছাড়া নির্বাচনকালীন যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি বিশেষ হটলাইন নম্বর চালুর সিদ্ধান্ত হয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সম্ভাব্য অপরাধীদের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শিগগিরই দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
