সরকার শামীম উজ্জামান:
একজন ” মা”! তিনিই সবচেয়ে ভাল করে জানেন সন্তান প্রসবের বেদনা কত প্রখর! কত যন্ত্রণাদায়ক!আর লালনের অনুভূতি’র কত মধুময় ঔদার্য্যতা-!তার সফলতার কী আনন্দ! একটা সত্যকে উপলব্দী করতে হলে নিজেকে উদার ও নিষ্ঠাবান থাকতে হয় প্রকৃত অর্থেই,সেই সঙ্গে সৎ ও নিরপেক্ষ তো বটেই। আজ পাঁচ দশক হতে চলছে আমরা কথার ফুল-ঝুঁড়ি ছিটিয়ে দেশ ও জাতিকে রাঙ্গিয়েছি।
আমার দুঃখিনী বাংলা শত লাঞ্ছনা -গুঞ্জনা’র পর “মা” হওয়ার বেদনা টুকুই শুধু পেল, কিন্তুু পঞ্চাশ বছরে -“মা’ হওয়ার শান্তনা টুকু পায় নাই-!এর মধ্যে রাষ্ট্রনীতির- পট-পরিবর্তন,বিবর্তণ,প্রবর্তন, সামরিক শাসন, বিয়োজন,সংযোজন করে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান পর্যন্ত নীতি কাঠামোর প্রসার ঘটেছে।
এখন প্রশ্ন হলো মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদানের অর্থ টা আসে কোত্থেকে-? নিঃসন্দেহে প্রজাতন্ত্রের জনগণের ট্যাক্স প্রদানের তহবিল থেকে এই অর্থের উৎস। এর মধ্যে যদি ভূঁয়াযোদ্ধা’রা সততার ব্যাত্যয় ঘটিয়ে এই অর্থ গ্রহন করে-! কী তার জবাব হবে-? বা তার বিচার’টায় কি হওয়া উচিত-? আমার মতে এই ক্ষেত্রেই উচিত হবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা মাথা উঁচু করে বুকভরা ভরসা নিয়ে এই জঘন্য অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। কিছু ভূঁয়াযোদ্ধা আছে যারা ভাতা পেয়ে সাদা দাঁড়িতে রং লাগিয়ে লোক সমাজে দাঁত বেড় করে তৃপ্তিভরে হাসে-!উচিত হবে তাদেরকে ঘাড় ধরে এনে রাষ্ট্রীয় অর্থ ফেরত দেয়ানো!
৭১’এর একজন শহীদ মুক্তি যোদ্ধাকে মহান আল্লাহ যদি প্রশ্ন করেন-হে মুক্তিযোদ্ধা রনাঙ্গনে যুদ্ধের সময় তোমার মুখের শ্লোগান কি ছিল-? নিঃসন্দেহে সে উত্তর দিবে আমার মুখের শ্লোগান ছিল–জয়-বাংলা।কিন্তু আমার ছাত্র রাজনীতির দুঃসময়ে তথাকথিত জনৈক মুক্তিযোদ্ধা দাবীদারের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছিল-জয়-বাংলা শ্লোগান পরিবর্তন করলে তিনি তৎকালীন সরকারী দল ছেড়ে আওয়ামী-লীগের সাথে থাকবেন কী-না ভেবে দেখবেন। অনাকাঙ্খিত এই উক্তিটি আওয়ামীলীগসহ সকল রাজনৈতিক মহল অবগত আছেন-! এই দৃষ্টতাপূর্ন উক্তি’র পরেও আমরা আওয়ামীলীগরা তাকে নিয়ে অনেক নাচানাচি করেছি। কিন্তুু একথা তো সত্যি যে,আমরা বাঙ্গালীরা সত্যের চরম অপলাপে পুলকিত ও হৃষ্ট হয়ে দাঁত কেলিয়ে নির্লজ্জের মতো হাসি-!
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে আওয়ামীলীগ অনেক দূ্র্যোগের মধ্য দিয়ে আজকের এই পর্যায়ে এসে উপনীত।-জয় বাংলা বলে শ্লোগান তোলার মত আজকের আওয়ামীলীগের অনেক’কেই রাজপথে সেদিন দেখি নাই। অথচ ঝুট ব্যাবসা করে তাদের জীবনে রাজনৈতিক পদ-পদবী ও ভাঙ্গা চেহারার আমূল-পরিবর্তন ঘটেছে-! এমনও অনেকেই আছেন~ যারা কেউ কেউ ৮০’র দশকে’র শুরু থেকে শেষ অবধি আওয়ামীলীগে’র দুঃসময়ে – তৎকালীন সরকারী দলের দালালী করে আমাদেরকে হেনস্তা করেছে, তারা এখন সংগঠনের ইমামতি করতে চায়-। আবার অনেকেই মোড়ল গিরি করেও গেছেন-!
একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চোখের সামনে থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা দাবীদার- ভুয়াযোদ্ধা যখন পুরস্কার বা ভাতা গ্রহন করে আর আওয়ামীলীগের দূর্দিন-দুঃসময়ে যারা দলের চৌদ্দ গোষ্ঠীর শ্রাদ্ধ করেছে -তারা যখন ত্যাগী নেতা-কর্মীদের পদ-পদবী অনুমোদন করে, তখন জগত সংসারের লীলাখেলার এই পাতানো নিয়মের মুখে বজ্র কঠিন আঘাত করতে ইচ্ছা করে।
হে মোর দূর্ভাগা দেশ-!বাঙ্গালী তার জন্মের গোড়া পত্তনেই ভেজালের সমাহার ঘটিয়েছে-! হায় রে—মুজিব বিহীন সোনার বাংলা —!!
আজ বলতে ইচ্ছা করছে~ ধরনী তুমি দ্বি-ধা হও- ! লুকিয়ে গিয়ে লজ্জিত মুখ খানা সংবরণ করি-!!
মোগল,পাঠান,পর্তূগীজ, ফিরিঙ্গী,সুলতান, ইংরেজ, বৃটিশ, বেনিয়া ও বর্গীদের দ্বারা বাঙ্গালী’র স্বপ্নে’র এই সোনার বাংলা কত যে, শাসিত ও শোষিত হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নাই-!তা না হলে বাঙ্গালী চরিত্রে অনেক গুন থাকা সত্বেও তার দ্যুতি ছড়াতে পারিনা।
আজ কেন-আমরা বিদেশ-বিলেত বলে ঢেঁকুর তুলে মন ও মুখের রুচিবোধ নষ্ট করে ফেলেছি?
আমার সোনার বাংলার মাটি কত উর্বর -!প্রাকৃতিক শোভা- সৌন্দর্য আর রুপ-যৌবনের মুগ্ধতার কোন ঘাটতি নাই-!!বাংলার নির্মল বাতাসে অক্সিজেনের কত পুষ্টি!!!-শুধু আমার শক্তিশালী দু-খানা হাত, সৎ প্রতিশ্রুতি-আর মননশীলতাকে কাজে লাগাতে পারলেই সোনার বাংলার চিত্র ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব নয়।