সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল (এইচ বি এম ইকবাল) এবং তার ছেলের বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় তার স্ত্রী ও অপর এক সন্তানের নামে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা হয়েছে।
অনুমোদিত প্রথম মামলায় সাবেক এমপি ডা. ইকবালের নামে ৬২ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮২ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুদকের মহাপরিচালক মো আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, অনুসন্ধানে সাবেক এমপি ইকবালের নামে ২৯৮ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৯ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর বিপরীতে তার দায় ১৩৯ কোটি ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯৪ টাকা। ফলে নিট সম্পদের পরিমাণ ১৫৯ কোটি ৬৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৫ টাকা।
অন্যদিকে বিভিন্ন খাতে তার আয় দেখা যায় ১৯০ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৫৬২ টাকা, ব্যয় ৯৩ কোটি ২৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৯ টাকা, ফলে নিট আয় হয় ৯৭ কোটি ৪১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৮৩ টাকা। এ হিসাবে তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৬২ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮২ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এ অপরাধে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা অনুযায়ী একটি মামলা রুজুর অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
অন্যদিকে ডা. ইকবালের পুত্র ইমরান ইকবালের নামে ৪৫ কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার ৩৯৭ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। তার নিট আয় ৪০ কোটি ৭০ লাখ ৯৬০ টাকা। ফলে তিনি ৫ কোটি ৩ লাখ ৯ হাজার ৪৩৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বলে দুদক জানায়। তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা অনুযায়ী আরেকটি মামলা রুজুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, ডা. ইকবালের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী ও অপর সন্তান মঈন ইকবালের নামে সম্পদ বিবরণী নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে স্ত্রী শিল্পীর নামে ১০ কোটি ৮২ লাখ ২২ হাজার ৮৬৬ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। যাচাইয়ে দেখা যায়, তিনি ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ ভোগ দখলে রেখেছেন।
ডা. ইকবালের অন্য পুত্র মঈন ইকবালের নামে ৪৭ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৮৭ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। তার নিট আয় ৪৭ কোটি ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ৬৪৫ টাকা, ফলে তিনি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৪৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ ভোগ দখলে রেখেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন অনুযায়ী ২৬(১) ধারায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে দুদক।
গত নভেম্বরে এইচ বি এম ইকবাল, তার দুই স্ত্রী ও সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ।
গত ফেব্রুয়ারিতে এইচ বি এম ইকবাল প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেন। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের অক্টোবরে দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এইচ বি এম ইকবাল, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।