বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৯, ২০২৫
No menu items!
বাড়িজাতীয়সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক দমনে

সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক দমনে

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

বুধবার (৮ অক্টোবর) সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার দলকে অবিলম্বে এসব বেআইনি আটক বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে এবং সরকারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেফতার থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করতে হবে।

এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। তিন সপ্তাহের সহিংস বিক্ষোভে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর চলতি বছরের ১২ মে সরকার সংশোধিত আইনের আওতায় দলটির সব কার্যক্রম ‘সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে। এতে সভা, প্রকাশনা ও অনলাইন কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা হয়।

এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যেন শেখ হাসিনার শাসনামলের মতো একই ধরনের দলীয় পক্ষপাতিত্ব না করে। কারাগার ভরে ফেলা বা শান্তিপূর্ণ বিরোধিতা বন্ধ করা সেই পথেই ফেরত যাওয়া। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে এখনই নজরদারি বাড়াতে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেফতার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এইচআরডব্লিউ জানায়, হাজারো মানুষকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের অনেকে দুর্বল অভিযোগে হত্যা বা সহিংসতার মামলায় অভিযুক্ত। আটক ব্যক্তিদের অনেকে হেফাজতে নির্যাতন ও চিকিৎসা বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন, যা শেখ হাসিনার আমলের ঘটনাগুলোর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৮ আগস্ট ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবনে অনুষ্ঠিত ‘মঞ্চ ৭১’ এর এক আলোচনায় অংশ নেওয়া ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে আয়োজিত হলেও কিছু লোক সেখানে গিয়ে অংশগ্রহণকারীদের ‘আওয়ামী লীগপন্থী’ বলে হেনস্তা করে। সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না পুলিশের সহায়তা চাইলে উল্টো পুলিশই তাকেসহ আরও ১৫ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওই ঘটনায় পুলিশ প্রথমে জানায়, নিরাপত্তার জন্য তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। পরবর্তী সময়ে আরও দুজনকে একই মামলায় গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের অভিযোগে বলা হয়, তারা সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছিলেন, যা প্রত্যক্ষদর্শীরা অস্বীকার করেছেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বরের এক জামিন শুনানিতে সাংবাদিক পান্নাকে হেলমেট, হ্যান্ডকাফ ও বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরিয়ে আদালতে আনা হয়। শুনানির সময় সরকারপক্ষের আইনজীবীরা আরেক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান। একজন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য বলেন, ‘ওটা ছিল আলোচনা সভা, রাজনৈতিক সমাবেশ নয়। তাহলে সেটা সন্ত্রাসবাদ হবে কীভাবে? যারা হামলা করলো তারা মুক্ত, কিন্তু যাদের ওপর হামলা হলো তারা কারাগারে। এই সরকারও মনে হচ্ছে আগের সরকারের মতোই আচরণ করছে।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করে। ২০২৫ সালে ইউনূস সরকার আইনটি সংশোধন করে দাবি করেছে, এটি আওয়ামী লীগের আমলে সংঘটিত অপরাধীদের জবাবদিহিতায় আনতেই করা হয়েছে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, নতুন সংশোধনী শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করছে।

বাংলাদেশ এডিটরস কাউন্সিল এক বিবৃতিতে সতর্ক করেছে, নতুন সংশোধনী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের পরিসর সংকুচিত করবে, যা উদ্বেগজনক। যদিও প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস দাবি করেছেন, দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুরোপুরি বিদ্যমান।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতায় রক্ষণশীল ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতাও বেড়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অন্তত ১৫২ জন জনতা কর্তৃক হামলায় নিহত হয়েছেন।

এক রাজনৈতিক কর্মী বলেন, ‘এখন আমাদের বিকল্প হলো জেলে যাওয়া বা জনতার হাতে মারা পড়া। অপরাধীদের শাস্তি হোক, কিন্তু সেটা ন্যায্য প্রক্রিয়ায় হওয়া জরুরি, যা ইউনূস সরকারের পক্ষে এখনো সম্ভব হয়নি।’

২০২৫ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর তিন বছরের সমঝোতা স্মারক সই করে। এর আওতায় বাংলাদেশে মানবাধিকার মিশন কাজ শুরু করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, এই মিশন বাংলাদেশের ‘মানবাধিকার প্রতিশ্রুতির প্রতীক’।

এইচআরডাব্লিউ প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এইচআরডব্লিউর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে রাজনৈতিক দমননীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এখন সরকারের মনোযোগ থাকা উচিত নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ সৃষ্টি করা।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ