বুধবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৫
No menu items!
বাড়িজাতীয়খাগড়াছড়ির সহিংসতার বিষয়ে যা বলছে আইএসপিআর

খাগড়াছড়ির সহিংসতার বিষয়ে যা বলছে আইএসপিআর

খাগড়াছড়ি ও গুইমারা উপজেলায় সাম্প্রতিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে এ বিবৃতি দেয় আইএসপিআর। এতে খাগড়াছড়ি ও গুইমারা এলাকায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলো সুপরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে জানানো হয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঘটনার সূত্রপাত
আইএসপিআর জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেলচালক মামুন হত্যাকাণ্ডের জেরে ইউপিডিএফ দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। এর এক বছর পূর্তিতে চলতি বছর ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে এবং অনুরূপ উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করে।

ধর্ষণ অভিযোগ ও উত্তেজনা
চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ইউপিডিএফের দাবিকৃত সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে ২৪ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে। পরে তাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও ইউপিডিএফের অঙ্গ সংগঠন পিসিপির নেতা উখ্যানু মারমা ‘জুম্ম ছাত্র জনতার’ ব্যানারে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দেন।

ক্রমবর্ধমান সহিংসতা
২৪ সেপ্টেম্বরের প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় ২৫ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফের আহ্বানে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। একই সময়ে দেশি–বিদেশি কিছু ব্লগার ও পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি অনলাইনে বাঙালিদের উদ্দেশে অপপ্রচার চালান বলে অভিযোগ ওঠে।

২৬ সেপ্টেম্বর উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিতে খাগড়াছড়িজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ চলাকালে ইউপিডিএফের প্ররোচনায় টহলরত সেনাদলের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়, এতে তিনজন সেনাসদস্য আহত হন। সেনাবাহিনী সংযম দেখিয়ে বলপ্রয়োগ না করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।

২৭ সেপ্টেম্বর দাঙ্গার চেষ্টা
পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ কর্মীরা পুনরায় দাঙ্গা-হাঙ্গামার চেষ্টা চালায়। খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকায় বাঙালি ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলি, ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ এবং রাস্তা অবরোধ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায়। পরিস্থিতি পাহাড়ি–বাঙালির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নিলে জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত তৎপরতায় সেদিন রাতেই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আসে।

২৮ সেপ্টেম্বর রামসু বাজারে সংঘর্ষ
পরদিন সকাল থেকেই ইউপিডিএফ কর্মীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে অবরোধ গড়ে তোলে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপিডিএফ কর্মীরা বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়ায় এবং সেনাবাহিনীর ওপর দেশীয় অস্ত্র, ইট-পাটকেল ও গুলতি নিয়ে হামলা চালায়। এতে সেনাবাহিনীর তিন কর্মকর্তা ও ১০ সদস্য আহত হন। একই সময়ে রামগড়ে বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর ও সদস্যদের আহত করার ঘটনাও ঘটে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রামসু বাজারের পাশের উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ সশস্ত্র দল প্রায় ১০০–১৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে, যাতে সেনা সদস্যসহ পাহাড়ি-বাঙালি এলাকাবাসী অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। সেনা টহল দল দ্রুত অভিযান চালালে সশস্ত্র দল পালিয়ে যায়। এসময় ইউপিডিএফের বহিরাগত দুষ্কৃতিকারীরা রামসু বাজারের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। অতিরিক্ত সেনাদল মোতায়েনের পর বিকেল সাড়ে ৪টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
আইএসপিআর জানিয়েছে, ইউপিডিএফ নারী ও স্কুলগামী শিশুদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে বাধ্য করছে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্রসহ পার্বত্য অঞ্চলে নিয়ে আসছে। ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে বিজিবির কাপ্তাই ব্যাটালিয়নের একটি চেকপোস্টে ইউপিডিএফের পরিবহন বিপুল দেশীয় অস্ত্রও জব্দ করা হয়।

বিভিন্ন প্রমাণাদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত
আইএসপিআর জানায়, গত ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাগড়াছড়ি এবং গুইমারা এলাকায় বিভিন্ন ঘটনাকে পুঁজি করে আইনের আশ্রয় না নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির বিষয়টি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে প্রতীয়মান। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রমাণাদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। গত কয়েকদিনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সব জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনসাধারণকে সংযত আচরণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইএসপিআরের আহ্বান
পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। সবধরনের অপপ্রচার, মিথ্যা প্রচারণা, উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য এ অংশের অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেছে আইএসপিআর।

 

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ