বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৬, ২০২৫
No menu items!
বাড়িজাতীয়নির্বাচন ৫ অথবা ১২ ফেব্রুয়ারি

নির্বাচন ৫ অথবা ১২ ফেব্রুয়ারি

আগামী বছরের ৫ অথবা ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ধরেই সব প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের ৪ অথবা ৭ তারিখে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। পাশাপাশি সংসদ ও গণভোট একই দিনে করার চিন্তা করছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

এ ক্ষেত্রে সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পেলে কমিশনের বৈঠকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসবে। যদিও সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দুই মেরুতে অবস্থান করছে। জুলাই সনদে মতভেদ (নোট অব ডিসেন্ট), গণভোটের বিষয়বস্তু, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং গণভোট কবে হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে এবং এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে তা নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ওই দিন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে, নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে।

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করা নিয়ে নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে না চাইলেও কছেশ দিন আগে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেছেন, ‘আমি কমিশনার হিসেবে বলছি না, দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যদি গণভোট করতেই হয়, তাহলে এক দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট করলে কোটি কোটি টাকা বেঁচে যায়।’

জাতীয় নির্বাচনের আগে বা একসঙ্গে গণভোট করতে হলে নির্বাচন কমিশন সেজন্য কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আমরা পত্র-পত্রিকায় যা দেখছি, এ মুহূর্তে এটা নির্ভর করছে পলিটিক্যাল কনসেনসাসের ওপর। এটা (গণভোটের সিদ্ধান্ত) রাষ্ট্রীয় ব্যাপার, সরকারের ব্যাপার। সরকার যদি মনে করে গণভোট করবে, তাহলে আমরা গণভোট ইনশাহআল্লাহ করব। তবে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট হলে বড় ব্যয় সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন এ কমিশনার। তিনি বলেন, এত ব্যয়বহুল কাজ দুই দিনে করাটা কঠিন হবে। কাজেই সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের কোনো বিষয় নয়। দুই নির্বাচন একত্রে করলে অনেক টাকা বেঁচে যায়। ফেব্রুয়ারিতে হলে একসঙ্গে দুই নির্বাচন করা সম্ভব বলেই মনে করছেন আবদুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে সম্ভব। তবে ভোট কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ কিছু বাড়ানো লাগতে পারে। এ ছাড়া খুব যে অসম্ভব তা নয়, বরং একসঙ্গেই ভালো।

গণভোট কখন কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনো মতভেদ আছে। কোনো কোনো দল সংসদ নির্বাচন ও গণভোট এক দিনে করার প্রস্তাব দিয়েছে। তেমনি জাতীয় নির্বাচনের এক মাস আগেও গণভোট করার প্রস্তাব এসেছে।

ইসির ভোট প্রস্তুতি : সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত হয়েছে ভোট কেন্দ্র। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলছে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ। দলের নিবন্ধন শেষ করেই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হবে চলতি মাসেই। আগামী ১৮ নভেম্বর সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখেরও বেশি। ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, নতুনদের নিয়ে এখন দেশের ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন।

তিনি বলেন, আমরা চূড়ান্তভাবে ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছি। মোট ৬৪টি জেলার ৩০০টি সংসদীয় আসনে কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৬১। কক্ষের হিসাবে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং মহিলাদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলকে (মার্কসবাদী) নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করে নিবন্ধনের চূড়ান্ত সনদ দেবে ইসি।

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারির মধ্যে নির্বাচনি আইনের সব ধরনের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান আইন সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন, ভোট কেন্দ্র নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষণ নীতিমালা, সাংবাদিক নীতিমালাসহ সব ধরনের আইন-বিধি সংস্কার করেছে ইসি। আরপিও সংশোধন হওয়ায় এর আলোকে দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা শিগগিরই জারি করবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থা ইসি।

এ ছাড়া প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নেওয়ার আয়োজন হচ্ছে ‘আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটের’ মাধ্যমে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সংসদ নির্বাচনে ১০ লাখের বেশি লোকবল নিয়োজিত থাকবে। একসঙ্গে গণভোট ও সংসদ নির্বাচন হলে এক আয়োজনেই দুই কাজ সেরে ফেলা সম্ভব। তা না হলে দুই দফায় একই মাপের আয়োজন করতে হবে দুই ভোটের জন্য। রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হবে সংসদ নির্বাচন; তার আগে ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করবে এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসি।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ