শুক্রবার, অক্টোবর ১০, ২০২৫
No menu items!
বাড়িসর্বশেষবিটিআরসি যেন টেলিটকের ‘মামাবাড়ি’

বিটিআরসি যেন টেলিটকের ‘মামাবাড়ি’

রাষ্ট্রমালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটকের দেনা বাড়ছেই। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছেই দেনার পরিমাণ সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যার বেশির ভাগই তরঙ্গের দাম।

টেলিটক নিলামের সময় নিয়মিত তরঙ্গ নিলেও তার দাম দেয় না। এমনকি লাইসেন্স ফি বা মাশুলও বকেয়া রাখে। রাজস্ব ভাগাভাগির নিয়ম থাকলেও তা মানে না অপারেটরটি। বিটিআরসি যেন তাদের ‘মামাবাড়ি’। উল্লেখ্য, ‘মামাবাড়ির আবদার’ একটি বাগ্‌ধারা, যা এমন একধরনের আবদার বা বায়নাকে বোঝায়, যেখানে কোনো নিয়মকানুন বা সীমা থাকে না।

বাজারে টেলিটকের ন্যূনতম প্রভাবও নেই। যে পরিমাণ তরঙ্গ টেলিটককে দেওয়া হয়েছে, তা অন্য কোম্পানিকে দেওয়া হলে গ্রাহক সুবিধা পেত এবং সরকারের রাজস্ব বাড়ত।

প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন

বিটিআরসির ২৯৭তম কমিশন সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, সংস্থাটি পাঁচ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ৬ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা পাবে। এর মধ্যে টেলিটকের কাছে পাওনা প্রায় ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। টেলিটকের কাছে তরঙ্গ বাবদ ৫ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, লাইসেন্স ফি বাবদ প্রায় ১২০ কোটি টাকা, রাজস্ব ভাগাভাগির অংশ বাবদ ১০২ কোটি টাকা, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের (এসওএফ) প্রায় ৫৮ কোটি এবং অন্যান্য খাতে সাড়ে ৪ কোটি ৫০ লাখ বকেয়া।

মোবাইল অপারেটর যে রাজস্ব আয় করে, তার সাড়ে ৫ শতাংশ বিটিআরসিকে দিতে হয়। আর ১ শতাংশ দিতে হয় সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে। এ টাকা দিয়ে দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সেবাসহ নানা প্রকল্প নেয় বিটিআরসি।

বিটিআরসির ২৯৭তম কমিশন সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, সংস্থাটি পাঁচ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ৬ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা পাবে। এর মধ্যে টেলিটকের কাছে পাওনা প্রায় ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। টেলিটকের কাছে তরঙ্গ বাবদ ৫ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, লাইসেন্স ফি বাবদ প্রায় ১২০ কোটি টাকা, রাজস্ব ভাগাভাগির অংশ বাবদ ১০২ কোটি টাকা, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের (এসওএফ) প্রায় ৫৮ কোটি এবং অন্যান্য খাতে সাড়ে ৪ কোটি ৫০ লাখ বকেয়া।

টেলিটকের মুখপাত্র মো. শামসুজ্জোহা গত মাসে  বলেন, বরাদ্দ করা তরঙ্গের বিপরীতে বকেয়া পরিশোধের জন্য টেলিটকের চাহিদার আলোকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বকেয়া অর্থ ইকুইটিতে (মূলধন) রূপান্তরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে টেলিটকের তরঙ্গ-সংক্রান্ত বকেয়া দায় নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।

টেলিটক ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানির (বিটিসিএল) কাছে আইজিডব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) লাইসেন্সের রাজস্ব বাবদ ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। অবশ্য এই পাওনার বিষয়ে মামলা চলছে।

বিটিআরসির একটি সূত্র বলছে, সংস্থাটি টেলিটককে পাওনা আদায়ে চিঠি দিয়েছে। তবে টাকা পায়নি।

বরাদ্দ করা তরঙ্গের বিপরীতে বকেয়া পরিশোধের জন্য টেলিটকের চাহিদার আলোকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বকেয়া অর্থ ইকুইটিতে (মূলধন) রূপান্তরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে টেলিটকের তরঙ্গ-সংক্রান্ত বকেয়া দায় নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।

টেলিটকের মুখপাত্র মো. শামসুজ্জোহা

দুর্বল টেলিটক

২০০৫ সালে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অপারেটর হিসেবে যাত্রা করে টেলিটক। তখন বেসরকারি অপারেটরদের সেবা নিতে খরচ ছিল অনেক বেশি। ফলে টেলিটকের সিম কিনতে মানুষকে লাইন দিতে দেখা গিয়েছিল। তবে টেলিটক ভালো করতে পারেনি। দিন দিন কোম্পানিটি দুর্বল হয়েছে। নেটওয়ার্কের আওতা, গ্রাহক সংখ্যা ও রাজস্বের দিক দিয়ে এটি বেসরকারি অপারেটরদের ধারেকাছেও নেই।

বকেয়া পরিশোধে টেলিটক ও বিটিসিএলকে তাগাদা দিল বিটিআরসি

সম্ভাবনা দেখাতে না পারলেও টেলিটককে উচ্চমূল্যের তরঙ্গ দিচ্ছে সরকার। বিটিআরসি ২০২২ সালের ৩১ মার্চ সর্বশেষ তরঙ্গ বরাদ্দের নিলাম আয়োজন করে। তাতে দেশের চার অপারেটর মিলে ১০ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার তরঙ্গ কিনেছিল। সে সময় গ্রামীণফোন ও রবি নিয়েছে ৬০ মেগাহার্টজ করে তরঙ্গ। আর বাংলালিংক ৪০ ও টেলিটক ৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিয়েছে। বেসরকারি অপারেটরগুলো কিস্তি অনুযায়ী টাকা দিলেও টেলিটক রেখেছে বকেয়া।

দেশের মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে গ্রামীণফোন ও রবি মুনাফা করে। বাংলালিংক হিসাব প্রকাশ করে না। টেলিটক বছর বছর লোকসান দিচ্ছে। তাদের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পরিচালকমণ্ডলীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই অর্থবছরে তাদের লোকসান ছিল ১৮০ কোটি টাকা।

বর্তমানে প্রতি ১০ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে টেলিটকের তরঙ্গ বরাদ্দ হচ্ছে ৩ দশমিক ৮৪ মেগাহার্টজ। যেখানে গ্রামীণফোনের শূন্য দশমিক ৫৬, রবির শূন্য দশমিক ৭৮ এবং বাংলালিংকের ১ দশমিক শূন্য ৪ মেগাহার্টজ।

ভালো মানের সেবা দিতে বেশি তরঙ্গ দরকার। টেলিটকের যেহেতু গ্রাহক ও নেটওয়ার্কের আওতা কম, সেহেতু বেশি তরঙ্গ থাকলেও তারা তা ব্যবহার করে গ্রাহক টানতে পারছে না। টেলিটকের কর্মকর্তারা সব সময় বিনিয়োগ কম হওয়াকে তাঁদের পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বর্তমানে প্রতি ১০ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে টেলিটকের তরঙ্গ বরাদ্দ হচ্ছে ৩ দশমিক ৮৪ মেগাহার্টজ। যেখানে গ্রামীণফোনের শূন্য দশমিক ৫৬, রবির শূন্য দশমিক ৭৮ এবং বাংলালিংকের ১ দশমিক শূন্য ৪ মেগাহার্টজ।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গত মাসে  বলেন, টেলিটক রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানি হওয়ায় কেনার মূলধন কার্যত সরকারের বরাদ্দ করা তহবিলের ওপর বর্তায়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংস্থাগুলোর মধ্যে বকেয়া এবং লেনদেনের ইস্যু রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাওনার এসব বিষয় একটি স্বাভাবিক চিত্র। তিনি বলেন, দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে সেবা, বাজার প্রতিযোগিতা ও সিগনিফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) ঠিক রাখা, গ্রাহক অনুকূলে মোবাইল কল ও ইন্টারনেটের দামে ভারসাম্য রক্ষা তরঙ্গ বরাদ্দ প্রক্রিয়াকে প্রতিযোগিতামূলক রাখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি মালিকানাধীন টেলিযোগাযোগ কোম্পানিকে তরঙ্গ বরাদ্দের চর্চা আছে।

বকেয়া রাজস্ব পরিশোধে ভর্তুকি চায় টেলিটক

অবশ্য টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টেলিটক বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

টেলিটক রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানি হওয়ায় কেনার মূলধন কার্যত সরকারের বরাদ্দ করা তহবিলের ওপর বর্তায়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংস্থাগুলোর মধ্যে বকেয়া এবং লেনদেনের ইস্যু রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাওনার এসব বিষয় একটি স্বাভাবিক চিত্র।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

বছর বছর লোকসান

দেশের মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে গ্রামীণফোন ও রবি মুনাফা করে। বাংলালিংক হিসাব প্রকাশ করে না। টেলিটক বছর বছর লোকসান দিচ্ছে। তাদের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পরিচালকমণ্ডলীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই অর্থবছরে তাদের লোকসান ছিল ১৮০ কোটি টাকা।

টানা লোকসানে থাকা সরকারি কোম্পানি টেলিটক থাকা উচিত কি না এবং থাকলেও তা কীভাবে, সে বিষয়ে বর্তমান সরকারের একটি শ্বেতপত্র করা উচিত ছিল বলে মনে করেন প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন। তিনি  বলেন, বাজারে টেলিটকের ন্যূনতম প্রভাবও নেই। যে পরিমাণ তরঙ্গ টেলিটককে দেওয়া হয়েছে, তা অন্য কোম্পানিকে দেওয়া হলে গ্রাহক সুবিধা পেত এবং সরকারের রাজস্ব বাড়ত।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ