হামজা দেওয়ান চৌধুরী সোমবার দুপুরে ঢাকায় আসার পর হোটেল-মাঠ যেখানেই গেছেন, ভক্তদের মাঝ থেকে একটি কথাই তার দিকে ছুটে গেছে, ‘হামজা ভাই, হংকংকে হারাতে হবে।’
আগের দিন প্রথম ও মঙ্গলবার দ্বিতীয় অনুশীলনের জন্য ঢাকা স্টেডিয়ামে ঢোকার পথে ও স্টেডিয়াম ছাড়ার সময়ও একই কথা শুনতে হয়েছে ইংলিশ লিগের ক্লাব লেস্টার সিটির এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে।
তবে হামজা মনে মনে কী ভাবছেন, সেটা ওই সমর্থকদের জানা হয়নি। নিজের অনুশীলনের দ্বিতীয় দিনে হামজা প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের সামনে এসে কথা বললেন হামজা। তার কণ্ঠেও যেন সমর্থকদের চাওয়ারই প্রতিধ্বনি, ‘হংকংকে হারাব।’
ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবারের অনুশীলন শুরুর আগে হামজা বলেছেন, ‘এ নিয়ে তৃতীয়বার আমি এসেছি (বাংলাদেশে)। এরই মধ্যে কোচিং স্টাফ, খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক খুব ভালো হয়েছে। সপ্তাহখানেক ধরে দলের সবাই কঠিন পরিশ্রম করছে। আমার ভালো লাগছে। ইনশাআল্লাহ আমরা জিতমু (জিতবো)।
‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে নিজেদের জয়ের বেশ সম্ভাবনা দেখছেন এই নাম্বার এইট, ‘খুব চান্স আছে। আমি কোচের সঙ্গে মাতছি (কথা বলেছি)। আমাদের ট্যালেন্ট আছে, এগ্রেসিভনেস আছে। লাস্ট স্টেপ হলো, বহুত কনফিডেন্স পাইয়া ইনশাআল্লাহ আমরা উইনিং টিম হমু (হবো)।’
হামজা চৌধুরী কেবল বাংলাদেশেরই নয়, উপমহাদেশেরও বড় তারকা। অভিজ্ঞ তো বটেই। কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরাকে তিনি কোনো পরামর্শ দেন কিনা জানতে চাইলে হামজা বলেন, ‘কোচ সব বড় সিদ্ধান্ত নেন। কিছু বিষয় নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেন। সেখানে আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করি। দল সপ্তাহখানেক ধরে খুব পরিশ্রম করছে। ইনশাআল্লাহ পরিকল্পনা ঠিক আছে।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে লম্বা সময়ই কথা বলেছেন হামজা। এ সময় উঠে এসেছে গত ১০ জুন এই মাঠে হওয়া সিঙ্গাপুর ম্যাচের কথাও। সেই ম্যাচে দল সুযোগ হারিয়েছে বলে মনে করছেন হামজা, ‘সে ম্যাচে সুযোগ কাজে লাগেনি। বড় মোমেন্টে আমরা নিজেদের হতাশ করেছি। দুই গোল হজম করেছি। রক্ষণে আরও ভালো করলে হয়তো গোল হজম করতাম না। এছাড়া আমরা একটা পেনাল্টি পেতে পারতাম। ফুটবল এমনই। মাঝেমধ্যে আমরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কোচ এবং দল একসঙ্গে খুব ভালো কাজ করছে। এখন আমরা হংকং ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। হংকং ম্যাচ অন্যরকম চ্যালেঞ্জ। তবে বিশ্বাস করি আমরা অবশ্যই জিতব। তাই আমাদের পরিকল্পনায় অটল থাকতে হবে।’
একজন পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে হামজা মনে করেন, ফুটবলে অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। তার ভাষায়, ‘এটা ফুটবল। চলার পথে এখানে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। আমরা কোনো অজুহাত দাঁড় করাব না। ভারত ও সিঙ্গাপুর ম্যাচেও চোট সমস্যা ছিল। শামিত (সোম) আজ রাতে আসবে। আমাদের স্কোয়াড খুব ভালো। বেঞ্চের খেলোয়াড়দের খুব বিশ্বাস আছে।’
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে হামজার গোলের একটা ভালো সুযোগ নষ্ট হয়েছিল। সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার পর নিজের খারাপ লাগার কথাই বলেছেন বাংলাদেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই তারকা, ‘খুব খারাপ লেগেছিল। সেই মোমেন্টটা রিপ্লেতে আবার দেখেছি আমি। পরেরবার ইনশাআল্লাহ সুযোগ কাজে লাগাতে পারব। আমি জানি আমাকে নিয়ে প্রত্যাশা বড়। আমি সেটা পূরণ করতে পারব। আসলে ওই দিনটা আমাদের পক্ষে ছিল না। আমরা দুটি অসাবধানী মুহূর্তে গোল হজম করেছি, যা করা উচিত ছিল না। শেষদিকে আমাদের একটা পেনাল্টিও দেওয়া উচিত ছিল।’
কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা অনুশীলনের প্রথম দনই বলেছেন, তিনি হামজাকে নিচে ও ওপরে দুই জায়গায়ই ব্যবহার করতে চান। এটা কি আপনার জন্য চাপ? হামজার জবাব, ‘জ্বি না (বাড়তি চাপ নয়)। মিডফিল্ডারের সংজ্ঞাই হলো আক্রমণ ও রক্ষণ দুই জায়গায় অবদান রাখা। তাই ইনশাআল্লাহ, আমি দুটোই ভালোভাবে করতে পারব। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তবে আমি বেশ রোমাঞ্চিত।’