রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫
No menu items!
বাড়িক্যারিয়ারনিজে রক্ত দিয়ে রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন নারায়ণগঞ্জের ডিসি

নিজে রক্ত দিয়ে রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন নারায়ণগঞ্জের ডিসি

মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি যোগ দিয়েই জেলাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তার বিভিন্ন জনবান্ধব কাজের মাধ্যমে। জেলা প্রশাসকের রুটিন দায়িত্বের বাইরেও বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কাজ করে তিনি আলোচিত জেলা প্রশাসক হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন।

‘গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন’ কর্মসূচির আওতায় এক লাখ বৃক্ষরোপণ, বেদখল খাল ও রাস্তা উদ্ধার, শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ, জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে দিতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগের কারণে সরকারের শীর্ষ মহলে প্রশংসিত হয়েছেন।

কিন্তু কর্মবান্ধব এ জেলা প্রশাসকের মনে তাতেও তৃপ্তি নেই। তার মনে হচ্ছিল, জেলার অভিভাবক হিসেবে জেলাবাসীর জন্য আরও অনেক কিছু করা উচিত।
তার সব ভালো উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জবাসী যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, তার কিছুটা ঋণ শোধ করতে আজ তিনি নিজেই রক্তদান করলেন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘তারুণ্যের উৎসব’-এ।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা রুবায়েদ হাসান সিরাজ জেলা প্রশাসকের রক্তদানের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, আমরা প্রায় প্রতিটি জেলায় একাধিকবার রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করেছি। কিন্তু জীবনে এই প্রথম দেখলাম জেলা প্রশাসক শুধু রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেই ক্ষান্ত হলেন না, উনি নিজেও রক্তদান করলেন। আমরা জেনেছি জেলা প্রশাসক নিজেও ছাত্রজীবন থেকেই নিয়মিত রক্তদান করে আসছেন। তাই আজকে তিনি রক্তদানের এই সুযোগ নিয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করলেন রক্তদানে। এটি নিঃসন্দেহে অন্যান্য জেলা প্রশাসকদের জন্যও আগামী দিনে উৎসাহব্যঞ্জক হবে।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সংগঠক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমি বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে রক্তদান কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত। আমরা এই জেলায় বিভিন্নস্থানে অগণিত রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করেছি। কিন্তু জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আমাদের কর্মসূচির আয়োজনের সুযোগ এটাই প্রথম। জেলা প্রশাসক মহোদয় শুধু রক্তই দান করেননি, উনি পুরো আয়োজনটা সার্বিকভাবে দেখভাল করেছেন একজন নিয়মিত রক্তদাতা হিসেবে। আমরা তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।

রক্তদান সংস্থা বাঁধনের সরকারি তোলারাম কলেজ শাখার আহ্বায়ক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা আগে দেখেছি সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ধরনের রক্তদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন এবং সবাইকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করেন, কিন্তু নিজেরা কখনো অংশ নেন না। কিন্তু আজ দেখলাম জেলা প্রশাসক মহোদয় সকালে সবার আগে নিজে রক্তদান করলেন। রক্তদানে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার অধস্তন অনেক কর্মকর্তাই আজ রক্তদান করেছেন। এভাবে সবাই যদি আগে নিজেরা রক্তদান করে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেন, তাহলে রক্তদান আরও সহজ হবে, দেশে রক্তের সংকটে কেউ মারা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের এই রক্তদান আমাদের অনেক বেশি উৎসাহিত করেছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নিজের রক্তদানের মধ্য দিয়ে ‘তারুণ্যের উৎসব’-এর উদ্বোধন করেছেন। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে এই উৎসবের সূচনা হয়।

সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় দিনব্যাপী এ রক্তদান কর্মসূচি পরিচালিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক নিজে রক্তদান করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। জেলা পুলিশ সুপার রক্তদানের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন রক্ষা করা যায়। একসময় রক্তের অভাবে মানুষ মারা যেত। এখন আমাদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ তৈরি হয়েছে, আমরা দুঃসময়েও মানুষকে সাহায্য করতে পিছপা হই না। এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর থেকে এখানকার মানুষ আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, আমি আসলে তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। আমি বুঝতে পারি না এই ঋণ কীভাবে শোধ করব। তাই যত কাজই করি না কেন, কোনো কিছুতেই তৃপ্তি পাই না। আমার মনে হয়, এই শহরের জন্য, এই জেলার জন্য আমার আরও অনেক কিছু করা উচিত। তাই আজকে আমি রক্তদান করে এই কর্মসূচি শুরু করছি।

আজ যারা রক্তদান করছেন, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আগামী প্রজন্ম যারা আজ রক্তদান করল, তারা অনেক কিছু শিখবে এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানে অনেকে উৎসাহিত হবে।

তিনি আরও বলেন, রক্তদান মানবতার সর্বোচ্চ রূপ। যারা রক্ত দিয়েছেন, তারাই জানেন এর মধ্যে কতটা তৃপ্তি ও স্বার্থকতা রয়েছে। অনেক রোগী আছেন, যাদের রক্ত প্রয়োজন অথচ সামর্থ্য নেই। এমন মানুষের পাশে দাঁড়াতেই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও বাঁধনের মতো সংগঠন কাজ করছে। আমরা চাই, সবাই মানুষের পাশে দাঁড়াক—এই মানবিক উদ্যোগের অংশ হোক।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ