জমকালো সাজে সেজেছে যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল। উপলক্ষটাও অনন্য, রাজকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সস্ত্রীক যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে এখানে রাজকীয় নৈশ্যভোজ আয়োজন করেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা।
বুধবার রাতের রাজকীয় এ আয়োজনে কূটনীতি, খাবার, ঐতিহ্য, সংগীত আর আভিজাত্য একসুতোয় বাঁধা পড়েছিল। ট্রাম্প–মেলানিয়াসহ রাজার অতিথি হয়েছিলেন বিশ্বের ১৬০ জন গণমান্য ব্যক্তি
ঝকঝকে হলঘরে সৈন্যদের মতো শৃঙ্খলিত কর্মীরা খাবার পরিবেশন করেন। টেবিল সাজানো ছিল ১ হাজার ৪৫২ পিস ছুরি–চামচ–তৈজস। একেকজন অতিথির সামনে ছিল পাঁচ রকমের গ্লাস।
খাবারের তালিকা ছিল ফরাসি ভাষায় লেখা। এতে ছিল—হ্যাম্পশায়ারের ওয়াটারক্রেস পানা কটার সঙ্গে পারমেজান শর্টব্রেড ও কোয়েল পাখির ডিমের সালাদ। জুচিনি দিয়ে মোড়ানো অর্গানিক নরফোক চিকেন ব্যালোটিন। এ পদ থাইম ও সেভরি মসলা মেশানো সসের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। আরও ছিল কেন্টের রাস্পবেরি সারবেত সহযোগে ভ্যানিলা আইসক্রিম। এর ওপরে হালকা পোচ করা ভিক্টোরিয়া পাম ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
অতিথিদের কয়েক পদের ওয়াইন পরিবেশন করা হয়। বিশেষ আকর্ষণ ছিল ট্রান্সআটলান্টিক হুইস্কি সাওয়ার ককটেল। এটা জনি ওয়াকার, কমলার জেলি, পেকান ফোম আর টোস্ট করা মার্শমেলোর অনন্য মিশ্রণ।
অতিথি ছিলেন কারা
ট্রাম্প–মেলানিয়া এবং চার্লস–ক্যামিলা দম্পতি ছাড়াও রাজকীয় এ নৈশ্যভোজে ছিলেন ট্রাম্পকন্যা টিফানি। ছিলেন প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন। ছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লসের বোন প্রিন্সেস অ্যান।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ওয়ারেন স্টিফেনস, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, যুক্তরাজ্যের উপপ্রধানমন্ত্রী ডেভিড লামি, অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস, কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনক প্রমুখ ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন।
প্রযুক্তি আর ব্যবসা জগত থেকে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক, ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান, ব্ল্যাকস্টোনের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন শোয়ার্জম্যান, মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডক প্রমুখ রাজকীয় এ নৈশভোজে অংশ নেন।
আরও ছিলেন গলফার নিক ফাল্ডো, অ্যাথলেট ডেম ক্যাথলিন গ্রেইঞ্জার প্রমুখ। তবে হলিউড কিংবা লন্ডনের বড় তারকাদের এ আয়োজনে দেখা যায়নি।
ট্রাম্পকে রাজকীয় সংবর্ধনা
গত মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প ও মেলানিয়া লন্ডনে পৌঁছান। তাঁদের বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ান স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করলে তাঁকে স্বাগত জানান লন্ডনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়ারেন স্টিফেনস। রাষ্ট্রদূতের বাসভবন উইনফিল্ড হাউসে সেই রাতে ছিলেন ট্রাম্প ও মেলানিয়া।
দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে গেছেন ট্রাম্প। বুধবার ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদ উইন্ডসর ক্যাসলে পৌঁছালে লালগালিচা সংবর্ধনা, তোপধ্বনি ও অশ্বারোহী বাহিনীর প্রদর্শনীর মতো রাজকীয় আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে সস্ত্রীক ট্রাম্পকে স্বাগত জানায় রাজপরিবার।
যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরে ট্রাম্প
প্রাসাদে ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে করমর্দন করছিলেন তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকেও একই রকম তোপধ্বনি হয়। ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল প্রায় ১২০টি ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য সে দেশে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাজ্যে এটা ট্রাম্পের দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর। দায়িত্ব পালনকালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুক্তরাজ্যে দুবার রাষ্ট্রীয় সফর বিরল ঘটনা। ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালের জুনে প্রথমবার যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন।