পহেলগামে হামলার জেরে দুই সপ্তাহের বেশি পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের পর মধ্যরাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে পাকিস্তান ভূখণ্ডের অন্তত তিনটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়।ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামের এই হামলায় কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু ছিল না।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী আরওয়াই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ভারতীয় বিমানবাহিনী বাহাওয়ালপুরের আহমদ ইস্ট এলাকার সুবহানুল্লাহ মসজিদ, কোটলি ও মুজাফফরাবাদে হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই কাপুরুষোচিত ও লজ্জাজনক হামলা ভারতের আকাশসীমা থেকেই চালানো হয়েছে। আমাদের আকাশসীমায় প্রবেশের অনুমতি ভারতীয় বাহিনী পায়নি। পাকিস্তান এর যোগ্য জবাব দেবে, সময় ও স্থান আমরা ঠিক করব।’
আইএসপিআর-এর বরাতে রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম পিটিভি নিউজ জানিয়েছে, ভারতের হামলায় এখন পর্যন্ত এক শিশু নিহত এবং একজন নারী ও একজন পুরুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। পাকিস্তান হামলার পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার পর মুজাফফরাবাদে জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং শহরজুড়ে বিদ্যুৎ চলে যায়।
এর আগে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষ যেকোনো সময় হতে পারে। আমরা প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত — সেটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, স্থল হামলা, বিমান বা নৌ-আক্রমণ হোক না কেন।’
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই)-এর সদরদপ্তর পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ‘প্রথাগত হুমকি’ মোকাবিলায় পাকিস্তানের প্রস্তুতির ওপর একটি বিশদ ব্রিফিং গ্রহণ করেন।
আইএসআই সদরদপ্তরের বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনীর, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নবীদ আশরাফ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমদ বাবরসহ উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম পেশাদার ও শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী। জাতি তাদের পাশে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান কোনো হুমকি—প্রথাগত হোক কিংবা হাইব্রিড—সহ্য করবে না এবং প্রয়োজনীয় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া হবে।’
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ভারতের পানি আগে বাইরে চলে যেত, এখন তা দেশের কাজে লাগানো হবে।’
যদিও মোদি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নদীর প্রবাহে হঠাৎ পরিবর্তন ‘প্রাকৃতিক’ নয়। এটি যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।
এর মধ্যে, আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারকে ফোন করে ‘বাণিজ্য ও ভ্রমণ সহজীকরণে পাকিস্তানের পদক্ষেপের’ প্রশংসা করেন। দু’দেশই আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ বজায় রাখার গুরুত্বে একমত হয়।