পুলিশকে কখনোই বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেইনি বলে দাবি করেছেন নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। হত্যায় ব্যবহৃত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র পুলিশের কাছে ছিলই না বলেও দাবি করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নেপালের সংবিধান দিবস উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বার্তায় প্রথমবারের মতো তিনি পদত্যাগ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন।
ওলি বলেন, আমার পদত্যাগের পর সিংহ দরবারে অগ্নিসংযোগ করা হলো, দেশের মানচিত্র পুড়িয়ে ফেলা হলো, জাতির পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করা হলো। প্রতিষ্ঠান, আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, নেতাদের বাড়িঘর ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বেছে বেছে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হলো।
দেশ উন্নতির পথে নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, এর বিচার করবে তরুণ প্রজন্ম।
জেন জি আন্দোলন প্রসঙ্গে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, আয়োজকরা নিজেরাই স্বীকার করেছেন আন্দোলনে অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। তার কথায়, ষড়যন্ত্রকারীরা সহিংসতা সৃষ্টি করেছে এবং আমাদের তরুণরা প্রাণ হারিয়েছে। সরকার কখনোই পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে নির্দেশ দেয়নি। তদন্তে বেরিয়ে আসুক, কারা সেই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা পুলিশের কাছেই ছিল না।
এসময় তিনি আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
সংবিধান প্রণয়নের সময় অবরোধসহ নানা চ্যালেঞ্জের কথা স্মরণ করে ওলি বলেন, নেপালের সংবিধান নেপালিরাই রচনা করেছে, যা দেশের অগ্রযাত্রার রোডম্যাপ। তিনি সব প্রজন্মকে এক হয়ে দেশ গড়ার আহ্বান জানান।
ওলির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি চার দফা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রথমবার ২০১৫ সালে দায়িত্ব নিয়ে ভূমিকম্প-পরবর্তী নেপালকে নেতৃত্ব দেন। এরপর ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন, ২০২১ সালে স্বল্প সময়ের জন্যও প্রধানমন্ত্রী হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাইয়ে নেপালি কংগ্রেসের সমর্থনে আবার ক্ষমতায় আসেন।
তবে সাম্প্রতিক মেয়াদে শাসন ও দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে জেন জি আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও ৮ সেপ্টেম্বর পুলিশ গুলি চালালে অন্তত ১৯ বিক্ষোভকারী নিহত ও চার শতাধিক আহত হন। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং দুই দিনের বিক্ষোভের পর ৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন ওলি।