নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংশ্লিষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ‘শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী হামলা’ চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
আইএসকে ‘ঘৃণ্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, এই সংগঠনটি ‘মূলত নিরীহ খ্রিস্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে’। তিনি বলেন, মার্কিন সেনাবাহিনী ‘একাধিক নিখুঁত ও সফল হামলা’ পরিচালনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানান, নাইজেরিয়ান সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি লিখেন, “মেরি ক্রিসমাস!”
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম) জানায়, নাইজেরিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে সোকোতো রাজ্যে এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ মাইতামা তুগ্গার বিবিসিকে নিশ্চিত করে বলেন, এটি একটি ‘যৌথ সামরিক অভিযান’ ছিল।
ভবিষ্যতে আরও হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি তুগ্গার। তিনি বলেন, “এটি নির্ভর করবে দুই দেশের নেতৃত্বের নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর।”
এর আগে গত নভেম্বরে ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নিতে মার্কিন সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “আমি নেতৃত্বে থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই উগ্র ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে বিকশিত হতে দেবে না।”
তবে ট্রাম্প খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ ও ‘হাজারো মানুষ নিহত হওয়ার’ যে অভিযোগ করেছেন, তার পক্ষে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। সহিংসতা পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন সংস্থা বলছে, নাইজেরিয়ায় মুসলমানদের তুলনায় খ্রিস্টানরা বেশি হত্যার শিকার হচ্ছেন—এমন কোনো প্রমাণ নেই। দেশটিতে মুসলমান ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মোটামুটি সমান।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা তিনুবুর উপদেষ্টা ড্যানিয়েল বোয়ালা বলেন, জিহাদি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ যৌথভাবে নেওয়া উচিত। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, নাইজেরিয়া একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং জঙ্গিরা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে না।
প্রেসিডেন্ট তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়ায় ধর্মীয় সহনশীলতা বিদ্যমান এবং নিরাপত্তাজনিত সংকট সব ধর্ম ও অঞ্চলের মানুষকে সমানভাবে প্রভাবিত করছে।
উল্লেখ্য, বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সহিংসতা চালিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকলেডের তথ্যমতে, এসব সহিংসতায় নিহতদের অধিকাংশই মুসলমান।
এছাড়া দেশটির মধ্যাঞ্চলে মুসলিম পশুপালক ও খ্রিস্টান কৃষকদের মধ্যে জমি ও পানির দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ চলছে, যেখানে উভয় পক্ষই নৃশংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়াতেও ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড জানায়, মধ্য সিরিয়ার ৭০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে যুদ্ধবিমান, আক্রমণকারী হেলিকপ্টার ও কামান ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে, যাতে জর্ডানের বিমানও অংশ নেয়।
