আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোল্ডাক এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে ও আজ বুধবার ভোরে পাকিস্তানি হামলায় ১২ থেকে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আফগানিস্তানের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রকে উদ্ধৃত করে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। প্রায় ১০০ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই আঘাত বেশ গুরুতর। তবে আপাতত লড়াই বন্ধ হয়েছে।
আফগানিস্তানের ইসলামি আমিরাত সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ আজ সকালে জানিয়েছেন, হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এই লড়াই নতুন করে আজ সকালে পাকিস্তান শুরু করেছে। আফগানিস্তান এই হামলার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা সবাই আফগানিস্তানের নাগরিক।
মুজাহিদ দাবি করেছেন, তালেবান বাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়ে ‘বহু পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করেছে’। তবে মৃতের নির্দিষ্ট সংখ্যা তিনি জানাননি। শুধু বলেছেন, তালেবান যোদ্ধারা বেশ কয়েকটি পাকিস্তানি ঘাঁটি দখল করেছেন বেশ কিছু অস্ত্র, বিশেষত ট্যাংক নিজেদের জিম্মায় নিয়েছেন।
আফগান সরকারের মুখপাত্র দাবি করেছেন, ‘ওই অঞ্চলে (স্পিন বোল্ডাক) পাকিস্তানের বেশির ভাগ সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে আফগানিস্তানের বাহিনী। পাকিস্তান এখনো এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি। আফগানিস্তানের বক্তব্য বা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এখনো নিরপেক্ষভাবে যাচাই হয়নি।
তবে আজ বুধবার পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বেলুচিস্তান সীমান্তে আফগান তালেবানদের একটি হামলা প্রতিহত করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ ঘটনায় ১৫ থেকে ২০ জন আফগান তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, আজ ভোরে আফগান তালেবানরা স্পিন বোল্ডাক এলাকার চারটি স্থানে ‘কাপুরুষোচিত হামলা’ চালায়। বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানি বাহিনী সফলভাবে এই হামলা প্রতিহত করেছে।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, পরিস্থিতি এখনো পরিবর্তিত হচ্ছে। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে চরমপন্থী ও আফগান তালেবানদের আরও সদস্য জড়ো হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলা ও বক্তব্য প্রমাণ করছে, সপ্তাহের শুরুতে যে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল, কোনোভাবেই তার আর কোনো গুরুত্ব নেই। দুই দেশের মধ্যে সংঘাত সীমান্ত অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানে যাওয়া-আসার প্রধান সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ করা হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে সড়কপথে সবজিসহ অন্যান্য কাঁচামাল পাকিস্তানে যেতে পারছে না। পাকিস্তান থেকেও সড়কপথে মালপত্র আসছে না। এতে কাবুলে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।
তবে আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চল, উত্তরের শহরসহ কাবুলে এখনো এই লড়াইয়ের কোনো ছাপ পড়েনি। দোকানপাট, স্কুল, অফিস সবই খোলা এবং জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
পাকিস্তানের বোমাবর্ষণের যে চিত্র সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ মারফত পাওয়া গেছে, তা থেকে এটা স্পষ্ট যে ওই অঞ্চলে গত রাত থেকে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। একাধিক মাটি ও ইট দিয়ে তৈরি কাঁচা বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। আফগানিস্তানের গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ বাড়ি মাটি ও পাথর দিয়ে বানানো। তাই সামান্য আঘাতেই তা ভেঙে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, তালেবান সেনাদের দেশের দক্ষিণে পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দিনে প্রধানত দক্ষিণ অংশে হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এক সপ্তাহ আগে এই লড়াই শুরু হওয়ার সময় পাকিস্তান আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে।