বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫
No menu items!
বাড়িআন্তর্জাতিকপ্রেসিডেন্টের ‘সাহসেই’ কি নেপালে আবার রাজতন্ত্র ফিরে আসা ঠেকেছে

প্রেসিডেন্টের ‘সাহসেই’ কি নেপালে আবার রাজতন্ত্র ফিরে আসা ঠেকেছে

নেপালে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে হাওয়ায় নানা রকম গুজব উড়েছিল। সাংবাদিকদের ফোন সমানে বেজে চলেছিল। রাজতন্ত্র ফিরে আসতে পারে—এ রকম একটি জল্পনাও শোনা যাচ্ছিল।

এসব গুজব ছড়াচ্ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল পদত্যাগ করেছেন বলে ব্রেকিং নিউজ চালিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

কাঠমান্ডুর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কিশোর নেপাল বলছিলেন, ‘মঙ্গলবার যখন কাঠমান্ডুর সব বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন মনে হচ্ছিল নেপাল বোধহয় আবারও রাজতন্ত্রের দিকে এগোচ্ছে।’

কিশোরের দাবি, সেদিন সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট পাওদেলকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন। তবে অন্য কয়েকজন আবার বলছেন, সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট যৌথভাবেই পরিস্থিতি সামলিয়েছেন।

কিশোর নেপালের কথায়, কাঠমান্ডুর রাজকীয় প্রাসাদ নারায়ণহিতিতে জ্ঞানেন্দ্র ফিরে আসার কথা শোনা যাচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেলকে সেনাবাহিনী ইস্তফা দিতে বলেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বিচক্ষণতা দেখিয়েছিলেন সেদিন।

নেপাল বলছিলেন, ‘সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্টকে বলেন, আপনি পদত্যাগ করুন, বাকিটা আমরা সামলিয়ে নেব। তখন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি পদত্যাগ করব না। আপনি বরং আমাকে খুন করুন আর জেন–জি প্রজন্মের আন্দোলনকারীদের ঘাড়ে হত্যার দায় চাপিয়ে দিন। এরপর আপনি যা করার করবেন।’

প্রেসিডেন্ট আর সেনাপ্রধানের মধ্যে এই কথোপকথন নেপাল কিশোর কীভাবে জানতে পারলেন?

জবাবে নেপাল বিবিসিকে বলেন, ‘আমি এই খবরের সূত্রটা বলব না; কিন্তু এটুকু বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রী অলিও সেনাপ্রধানের কথামতো ইস্তফা দিয়েছিলেন। আর ঠিক একই রকম চাপ ছিল প্রেসিডেন্টের ওপরেও। যদি প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করতেন, তাহলে নেপাল সেনাশাসন বা রাজতন্ত্রের দিকে ঘুরে যেত। প্রেসিডেন্ট সত্যিই হিম্মত দেখিয়েছেন।’

অন্যদিকে কিশোর নেপালের ভাষ্যের সঙ্গে একমত নন নেপালের সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল (অব.) বিনোজ বস্নেত।

বিনোজের কথায়, ‘আমার মতে সেনাপ্রধান আর প্রেসিডেন্ট একযোগে একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করেছেন। কঠিন পরিস্থিতি থেকে দেশকে উদ্ধারের জন্য কখনো সেনাবাহিনীকে সামনে আসতেই হয়।’

সংকট এখনো কাটেনি

কনক মণি দীক্ষিত নেপালের পরিচিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। দেশটির ক্ষমতাসীন মহলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ভালো। রাজতন্ত্র নিয়ে তাঁর মনেও বেশ কিছু আশংকা রয়েছে।

দীক্ষিত বিবিসিকে বলছিলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রতিটা স্তম্ভই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু রাজকীয় প্রাসাদ নারায়ণহিতিতে কেউ হাত পর্যন্ত দেয়নি। জ্ঞানেন্দ্রর বাসভবনও সুরক্ষিত থেকেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজতন্ত্র নিয়ে মনে তো একটা আশংকা তৈরি হচ্ছেই। তবে আমিও মনে করি, এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।’

কিশোর নেপাল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যা যা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা একটি গভীর সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্যই করা হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে সংকট থেকে মুক্তি পেয়েছে নেপাল।’

নেপাল বলেন, এ পরিস্থিতিতে দুটি বিকল্প ছিল, প্রেসিডেন্টকে হয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে একমত হতে হতো অথবা সেনাবাহিনীকে প্রেসিডেন্টের মতামত মেনে নিতে হতো।

নেপালের পরিচিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক সি কে লালও আন্দোলনের পরে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করছিলেন।

লালের কথায়, ‘প্রেসিডেন্টের ওপর প্রবল চাপ ছিল। সংসদ ভেঙে দিতে চাইছিলেন না প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল। তাই তিনি নিজে না করে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ পাওয়ার পরে সংসদ ভেঙে দেন। পাওদেল চাননি, সংসদ ভেঙে দেওয়ার দুর্নামটা তার ওপরে এসে পড়ুক। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এসব সত্ত্বেও আমি বলব, প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা অনুসারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

৮ ও ৯ সেপ্টেম্বরের আন্দোলনের একটি অংশের নেতৃত্ব দিয়েছেন রাকশা বম। নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল ৯ সেপ্টেম্বর রাতে জেন–জির যে প্রতিনিধিদের আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন, তাঁদের মধ্যে রাকশা বমও ছিলেন।

রাকশা বিবিসিকে বলছিলেন, ‘সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে জেন–জির ১০ প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছিল, যাঁদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আমি সেখানে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলাম, আপনার সঙ্গে আলোচনা করব না। কারণ, আমরা বেসামরিক সরকার গড়তে চাই। তাই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করব আমরা। সেনাপ্রধান বলেছিলেন, আপনারা নিজেদের দাবি আমাকে বলুন, আমিই প্রেসিডেন্টের কাছে সেগুলো পৌঁছে দেব।’

রাকশা বম বলছিলেন, প্রেসিডেন্ট বিচক্ষণতা আর সাহস না দেখালে নেপাল হয় সামরিক শাসন অথবা রাজতন্ত্রের হাতে চলে যেতে পারত।

রাকশার কাছে প্রশ্ন ছিল, জেন–জির আন্দোলনের সময়ে যা যা হয়েছে, সেসব ঘটনা কি চোখে দেখেছেন তিনি।

রাকশা বম বলছিলেন, ‘সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা তো আমার একেবারেই পছন্দ না। আসলে ৯ সেপ্টেম্বরের আন্দোলন ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল।’

নেপালের পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে জড়িত ইন্দিরা অধিকারীর সঙ্গে জেন–জির আন্দোলনকারীদের সঙ্গে লাগাতার সম্পর্ক ছিল; আর তিনি আন্দোলনকারীদের পরামর্শও দিচ্ছিলেন।

ইন্দিরাও স্বীকার করছিলেন, প্রেসিডেন্ট বিচক্ষণতা দেখিয়েছেন, না হলে নিয়ন্ত্রণ হাতের বাইরে চলে যেত।

সেনাবাহিনীর ভূমিকা

ইন্দিরা অধিকারী বলছিলেন, ‘জেন–জির সঙ্গে আলোচনার সময়ে সেনাপ্রধান রাজতন্ত্রের সমর্থক দুর্গা প্রসাই, রবি লামিছানের দল আরএসপি এবং রাজতন্ত্রের সমর্থক আরেকটি দল আরসিপিকেও ডেকে নিয়েছিলেন। এর পরেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, আসলে কী হতে চলেছে।’

ইন্দিরা অধিকারী বলছিলেন, ‘আন্দোলন তো জেন–জির ছিল; কিন্তু সেনাবাহিনী রাজতন্ত্রের সমর্থকদেরও আলোচনায় কেন ডেকে নিল? আমি এই তরুণ-তরুণীদের বলেছিলাম, তোমাদের বিশেষ গুরুত্ব দেবে না এরা, তাই নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাও। এর পরেই সুশীলা কারকির নামে সবাই একমত হলেন।’

ইন্দিরার কথায়, ‘সুশীলা কারকিকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরাটা একটি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত ছিল। সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করতে প্রেসিডেন্টের সহায়ক হয়ে উঠল এই সিদ্ধান্ত। আমার মনে হয়, সুশীলাকে প্রধানমন্ত্রী বানানোটা রাজতন্ত্রের সমর্থকদের কাছে একটি বড় ধাক্কা। প্রথমে তো আমাদের মনে হচ্ছিল, নিয়ন্ত্রণটা আমাদের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে; কিন্তু প্রেসিডেন্টই একটি সমাধানের পথ বের করলেন।’

কিন্তু জেন–জির ওপরে কি তাঁর বিশ্বাস আছে—এই প্রশ্নের জবাবে ইন্দিরা বলছিলেন, ‘দেখুন, যা হয়েছে, তাতে ঝুঁকি তো ছিলই। যে প্রজন্ম আন্দোলন করেছে, তারা রাজনীতি একটু কমই বোঝে।’

ইন্দিরা বলেন, এই জেন–জি প্রজন্মের তরুণেরা বলেন, রাজনীতিকে তাঁরা ঘৃণা করেন। রাজনীতির সত্যিকারের অর্থ তাঁরা জানেন না। তাঁরা এটিও জানেন না, নাগরিক অধিকারের জন্য রাজনীতি কতটা জরুরি। যাঁদের ব্যবস্থার বিষয়ে জ্ঞান নেই, তারাই দ্রুত সমাধান চায়। জেন–জি প্রজন্মেরও এটি সমস্যা।

জেন–জির আন্দোলন রাষ্ট্রের বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি করেছে। তবে ইন্দিরা অধিকারী মনে করেন, যাঁরা আন্দোলনটা শুরু করেছিলেন, তাঁদের এসব ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী করা যায় না।

ইন্দিরা অধিকারী বলছিলেন, ‘জেন–জির একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমা আছে। কোনো নীতিগত বিচারধারা মেনে চলা যুব সমাজ নয় তাঁরা। তাঁদের মধ্যে অনেক ধরনের মানুষ আছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ নিয়মকানুন মেনে চলেন, কেউ আবার মানেন না। এর বিপদটা হলো, তাঁদের নেতা কে বা তাঁর চিন্তাধারা কী, এটাই তো আমরা জানি না।’

ইন্দিরার কথায়, ‘কে গণতন্ত্র চায়, কে রাজতন্ত্রের সমর্থক, আমরা এটিও জানি না। আমি নিজেই আশ্বস্ত হতে পারছি না, এ ধরনের সহিংসতা আবারও হবে না। হতে পারে জেন–জিরা সংসদ আর সংবিধানকে এড়িয়ে চলার জিদ ধরে থাকলেন; কিন্তু সুশীলা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন, তিনি আইনটি ভালো করেই জানেন।’

বালেন শাহকে নিয়ে প্রশ্ন

আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময়ে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বালেন শাহই সুশীলার নাম প্রস্তাব করেছিলেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা এবং সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবিও তারই তোলা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সি কে লাল বলছিলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করার পরিবর্তে বালেন শাহ সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছিলেন।

সি কে লাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করার পরে বেসামরিক সরকার গঠনের দায়িত্ব সেনাপ্রধানের ওপরে নয়, প্রেসিডেন্টের ওপরে ছিল; কিন্তু বালেন শাহ প্রেসিডেন্টকে উপেক্ষা করলেন। এর থেকেই বোঝা যায়, পর্দার আড়ালে অন্য কোনো খেলা চলছিল।

লালের কথায়, আসলে বালেন শাহ একটি মুখোশ, যার নিয়ন্ত্রকেরা দেশের ভেতরে ও বাইরে—দুই জায়গাতেই আছেন। সুশীলাও মার্কিন লবির কাছাকাছি থেকেছেন। এখন তিনি নিজেকে ভারতের কাছাকাছি বলে দেখাচ্ছেন। সুশীলার ছবি আর বাস্তবতার মধ্যে খুব একটা মিল নেই।

যদি সুশীলা কারকিকে বালেন শাহ সমর্থন না করতেন, তাহলে কি তার পক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হওয়া অসম্ভব ছিল?

ইন্দিরা অধিকারী মনে করেন, সেটি অসম্ভব ছিল।

এখানেই প্রশ্ন ওঠে, বালেন শাহ কেন সুশীলাকে সমর্থন করলেন?

ইন্দিরা অধিকারী বলছিলেন, কাঠমান্ডুর মেয়র হিসেবে বালেন শাহ শহরের রাস্তা থেকে ঠেলা আর ছোটখাটো স্টলগুলো সরিয়ে দিতে অভিযান চালাচ্ছিলেন; কিন্তু এটা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়। তখন বালেন শাহকে সমর্থন করেছিলেন সুশীলা। সুশীলা কারকি বলেছিলেন, নেপালের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো বালেনকে কাজ করতে দিচ্ছে না।

আবার বিশ্লেষক সি কে লাল বলেন, নেপালের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধিতা করেন বালেন শাহ। এখন বালেনের সমর্থন পাচ্ছেন সুশীলা, যাতে বিস্মিত হতে হচ্ছে। নেপালের মানুষ যদি মনে করেন, বালেন শাহ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী অলি বা প্রচণ্ডর বিকল্প হয়ে উঠবেন, তাহলে তাঁদের ভাবনাচিন্তা করার দরকার আছে।

লালের কথায়, ‘নেপালের সংকট তো এখন শুরু হলো। নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হলেও আমার মনে হয় না সময়মতো ভোট হবে। প্রথমে তো বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে ভাঙা–গড়া চলবে। বেশ কয়েকজন নতুন নেতাকে সামনে আনা হবে। যখন ব্যবস্থা এই ব্যাপারে আশ্বস্ত হবে—নতুন নেতৃত্ব বাকিদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে, ভোটটা তখন হবে।’

সুশীলার প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে যত প্রশ্ন

সুশীলা কারকি নেপালের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী তো হয়েছেন, তবে এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নও উঠছে।

আসলে নেপালের সংবিধান অনুযায়ী, প্রতিনিধি সভার সদস্য নন এমন কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না। নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে গেলে প্রতিনিধি সভার সদস্য হওয়া আবশ্যক।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সুশীলা কারকি সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন আর প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল তাতে সিলমোহর দেন। নেপালের সংবিধানে এই পদ্ধতিতে সংসদ ভেঙে দেওয়ার অনুমোদন নেই। মন্ত্রিসভার সুপারিশক্রমে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভাঙতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে প্রতিনিধি সভার সদস্য নন, এমন ব্যক্তিরা সংসদ ভেঙেছেন এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীও করা হয়েছে এমন একজনকে, যিনি সংসদ সদস্য নন।

নেপালের সাবেক নির্বাচন কমিশনার নীলকণ্ঠ উপ্রেতি বিবিসিকে বলছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পুরো প্রক্রিয়াটাই অসাংবিধানিক; কিন্তু সমাধানের কোনো সাংবিধানিক উপায়ও ছিল না। নেপাল বার অ্যাসোসিয়েশনও সংসদ ভেঙে দেওয়াকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছে।

নেপালের তিনটি বড় রাজনৈতিক দল—নেপালি কংগ্রেস, কে পি অলির নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (একীভূত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) এবং পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ডের নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী কেন্দ্র) সংসদ ভেঙে দেওয়া ও সুশীলাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানোর সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছে।

সুশীলা কারকি ঘোষণা করেছেন, আগামী বছরের ৫ মার্চ নির্বাচন হবে; কিন্তু নির্বাচনের দিন নিয়ে অনেকেই এখনো আশ্বস্ত হতে পারছেন না। বলা হচ্ছে, নেপালের বর্তমান পরিস্থিতিতে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

এ ছাড়া সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মেয়াদ আরও দুই বছর রয়েছে। এ অবস্থায় দুই বছর আগেই নির্বাচনী লড়াইতে নামা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে বেশ কঠিন।

নেপালের সংবিধানবিশেষজ্ঞ বিপিন অধিকারী বলছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে গিয়ে সংবিধানকে পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং জনপ্রিয় আন্দোলনের চাপে সব কিছু করা হচ্ছে।

ইন্দিরা বিবিসিকে বলছিলেন, ‘অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তগুলোই সাংবিধানিক রীতিতে পরিণত হচ্ছে। এটা আমাদের পক্ষে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমার মনে হয়, প্রেসিডেন্টের কাছে খুব বেশি বিকল্প ছিল না। তাই বেসামরিক সরকার গঠনের জন্য কোনো একটি সমঝোতা তাঁকে করতে হয়েছে।’

ইন্দিরা আরও বলেন, ‘তবে আমার আশঙ্কা হলো, সব কঠিন পরিস্থিতিতে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া একটি খারাপ প্রবণতা হয়ে দাঁড়াবে। সমাধানের পথ তো সংবিধানের মধ্য থেকেই খুঁজতে হবে, তার বাইরে গিয়ে নয়।’

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ