সন্ত্রাসী সংগঠন টিটিপি (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান) ও আফগান মাটি ব্যবহারকারী অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর বিষয়ে সমাধান খুঁজতে পাকিস্তান ও আফগান তালেবান সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা দোহায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ইসলামাবাদ আলোচনায় প্রস্তুত—যদি কাবুল তাদের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়ে আন্তরিকতা দেখায়।
তিনি মন্ত্রিসভাকে জানান, ‘আমরা বারবার কাবুলকে আহ্বান জানিয়েছি যাতে তারা আফগান মাটি থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, কিন্তু এখনো পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা সেখানে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
শাহবাজ বলেন, সাম্প্রতিক সীমান্তপারে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর পর পাকিস্তানের ধৈর্য শেষের পথে।
‘এই সন্ত্রাসীরা আমাদের নাগরিক, সেনা সদস্য, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছে। সাম্প্রতিক ঘটনায় আমাদের ধৈর্যসীমা অতিক্রম করেছে,’ তিনি বলেন।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী জানান, ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির শুরুতেই ইসলামাবাদ কাবুলকে জানিয়ে দিয়েছে—যদি তারা আলোচনায় আন্তরিক হয়, পাকিস্তান সংলাপে বসতে প্রস্তুত। ‘যদি আফগান তালেবান আমাদের বৈধ শর্তে আলোচনার ইচ্ছা পোষণ করে, আমরা তাতে রাজি,’ বলেন শাহবাজ।
বুধবার পাকিস্তান ও আফগান তালেবান উভয়েই সীমান্তে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যা মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আফগান পক্ষের অনুরোধে ও পারস্পরিক সম্মতিতে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়। ‘এই সময়ের মধ্যে উভয় পক্ষ গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে জটিল কিন্তু সমাধানযোগ্য সমস্যাটির ইতিবাচক সমাধান খুঁজবে,’ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই, কিন্তু কাবুলের নিষ্ক্রিয়তার কারণে কোনো অগ্রগতি হয়নি।’
তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলো ভারতের ইন্ধনে পরিচালিত হয়েছে। ‘যে সময় আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে ছিলেন, ঠিক তখনই সীমান্তে হামলা হয়,’ দাবি করেন তিনি।
এরই মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে উত্তেজনা প্রশমনে। কাতার মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে—দোহা জানিয়েছে, তারা পাকিস্তান ও আফগান তালেবান সরকারের মধ্যে সংলাপ পুনরুজ্জীবনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চায়।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. আবদুলআজিজ আল-খুলাইফির বার্তা পেয়েছেন, যেখানে তিনি পাকিস্তানের আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ভূমিকার প্রশংসা করেন। দার কাতারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের সহযোগিতা পাকিস্তান উচ্চমূল্যায়ন করে।
বর্তমানে তোরখাম ও চামান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ রয়েছে সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণে, যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সবকিছু শুরু হয় গত সপ্তাহে, যখন পাকিস্তান কাবুলে টিটিপি প্রধানকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় বলে খবর প্রকাশিত হয়। ইসলামাবাদ তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার বা অস্বীকার করেনি, তবে কাবুল পাকিস্তানকেই দায়ী করে। এর দুই দিন পর আফগান বাহিনী চিত্রাল থেকে বেলুচিস্তান পর্যন্ত একাধিক পাকিস্তানি সেনা চৌকিতে হামলা চালায়।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাল্টা শক্ত প্রতিক্রিয়া জানায়—ভারী অস্ত্র ও বিমান শক্তি ব্যবহার করে আফগান ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। কয়েক দিনের বিরতির পর ১৪ অক্টোবর আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়, যখন আফগান বাহিনী কুররম সীমান্তে প্রথমে গুলি ছোড়ে। পাকিস্তান এরপর কাবুল ও কান্দাহারে নির্ভুল হামলা চালায়।
এতে চাপে পড়ে তালেবান সরকার সৌদি আরব ও কাতারের শরণাপন্ন হয় যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতার জন্য। পাকিস্তান তাতে সম্মত হয় শর্তসাপেক্ষে—কাবুল যদি নিরাপত্তা উদ্বেগ সমাধানে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়। অন্যথায় ইসলামাবাদ আফগান ভূখণ্ডে হামলা পুনরায় শুরু করবে বলে জানানো হয়।