বুধবার, আগস্ট ২০, ২০২৫
No menu items!
বাড়িআন্তর্জাতিকচীন-ভারত সীমান্ত বিরোধ মেটাতে দিল্লির বৈঠকে কী আলোচনা হলো?

চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধ মেটাতে দিল্লির বৈঠকে কী আলোচনা হলো?

দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ মেটাতে চীন আর ভারত মিলে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ভারত সফররত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি মাসের শেষের দিকে চীন সফরে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সময়ে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানইজেশন (এসসিও) বৈঠকেও যোগ দেবেন তিনি।

গত সাত বছরে এটাই হবে তার প্রথম চীন সফর। সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করবেন নরেন্দ্র মোদি। এর আগে, দুই শীর্ষ নেতা ২০২৪ সালের অক্টোবরে কাজানে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে দেখা করেছিলেন।

দু’দিনের ভারত সফরে এসে দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সোমবার বৈঠকের পর ওয়াং ই বলেছিলেন, ভারত আর চীন একে অপরকে ‘প্রতিপক্ষ বা হুমকি’ হিসেবে না দেখে ‘অংশীদার’ মনে করা উচিত।

দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারণ নিয়ে যে অস্বচ্ছতা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে, তা মেটানোর জন্য মঙ্গলবার বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের ২৪তম বৈঠক হয় দিল্লিতে।

চীনা প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ওয়াং ই এবং ভারতের পক্ষে প্রতিনিধি ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। সীমান্ত বিরোধ মেটাতে যে ব্যবস্থাপনা ইতোমধ্যে রয়েছে, তারই অধীনে একটি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী এবং আরেকটি কার্যকরী গোষ্ঠী গঠন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উত্তেজনা প্রশমনের ব্যাপারে কীভাবে আলোচনা করা যেতে পারে, সে বিষয়ে কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে সীমান্ত ব্যবস্থাপনার কথাও বলা হয়েছে বৈঠকে।

দোভাল বৈঠকে মন্তব্য করেছেন, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি বজায় রয়েছে। তার কথায়, শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রয়েছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে কাজানে যেসব বিষয়ে একমত হয়েছিলাম, তা থেকে আমাদের উপকার হয়েছে। যে নতুন পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তার ফলে অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছে।

ওই বৈঠকে ওয়াং ই বলেছেন, গত কয়েক বছরে ভারত আর চীন দুই দেশই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, যা কোনও দেশের স্বার্থের পক্ষেই উপকারী নয়। তিনি আরও বলেন, এখন সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। ইতিহাস ও বাস্তবতাই এটা প্রমাণ করে যে ভারত ও চীনের মধ্যে সুসম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশেরই স্বার্থ পূরণ করে।

এর আগে, গত ১৮ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চীনের বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং ই পৃথক বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, আমাদের সম্পর্কের একটি কঠিন সময় পার করে এখন দুই দেশই এগিয়ে যেতে চায়। এর জন্য উভয় পক্ষের সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।

তিনি বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, পারস্পরিক সংবেদনশীলতা ও পারস্পরিক স্বার্থ; এই তিনটি মূল্যবোধের ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হবে। মতপার্থক্য যেন দুটি দেশের মধ্যে বিবাদে পরিণত না হয়। জবাবে ওয়াং ই বলেন, সুসম্পর্কের জন্য সীমান্তে শান্তি থাকা প্রয়োজন এবং উত্তেজনা প্রশমনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া উচিত।
• মোদির চীন সফর

ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠকের পর নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মোদি লিখেছেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে দেখা করে আনন্দিত। গত বছর কাজানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আমার বৈঠকের পর থেকে পারস্পরিক স্বার্থ ও সংবেদনশীলতাকে সম্মান জানিয়েই ভারত আর চীনের সম্পর্কে ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে।

ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিয়ানজিনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে আমাদের পরবর্তী বৈঠকের জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
• মোদির চীন সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ?

নরেন্দ্র মোদি এমন এক সময়ে চীন সফরে যেতে চলেছেন যখন একদিকে লাদাখের গালওয়ানে দুই দেশে সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাতের পরও সীমান্ত বিরোধ পুরোপুরি মেটেনি। অন্যদিকে ভারত আর পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ চলাকালীন চীনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে।

পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে ২০২০ সালে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা এবং বেশ কয়েকজন চীনা সেনা নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার বেশ কয়েক মাস পর সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে দুই দেশই সম্মত হয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আলোচনা শুরু হয়।

আবার ভারত যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিন্দুর শুরু করে, সেই সময়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশহাক দার দাবি করেছিলেন, ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে জে-টেন সি যুদ্ধবিমান কাজে লাগানো হয়েছিল। ওই পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান চীনের তৈরি।

অন্যদিকে, ওয়াং ই এরপর পাকিস্তানেও সফর করবেন এবং সেদেশের নেতৃত্বের সঙ্গে তার বৈঠকও রয়েছে। মঙ্গলবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে, কিন্তু চীন আবার পাকিস্তানের ভালো মিত্র। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উন্নত করা কতটা কঠিন?

এই প্রশ্নের জবাবে নিং বলেন, ভারত আর পাকিস্তান দুটি দেশই চীনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা দুটি দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা বাড়াতে ইচ্ছুক এবং আশা করি দুই দেশের মধ্যে যে মতপার্থক্য আছে, তার যথাযথ সমাধান হবে।
• ভারত-চীন বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ঐকমত্য

চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, নির্দিষ্ট কিছু জায়গা দিয়ে বাণিজ্য কীভাবে আবারও শুরু করা যায়, সে ব্যাপারে দুই দেশই কাজ চালাচ্ছে।

চীন-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য যেসব জায়গা দিয়ে আবারও শুরু করা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাস, হিমাচল প্রদেশের শিপকি লা পাস এবং সিকিমের নাথু লা পাস। গালওয়ান সংঘর্ষ এবং কোভিড মহামারীর সময় এই রুটগুলো দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

বিবিসি বাংলা।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ