বুধবার, অক্টোবর ২৯, ২০২৫
No menu items!
বাড়িআন্তর্জাতিকগাজা যুদ্ধের সংবাদে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগে ১৫০ লেখক নিউইয়র্ক টাইমস বর্জন করছেন

গাজা যুদ্ধের সংবাদে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগে ১৫০ লেখক নিউইয়র্ক টাইমস বর্জন করছেন

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এবং গাজায় যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশনে ‘পক্ষপাতিত্ব’ করার অভিযোগ এনে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার মতামত বিভাগে আর লিখবেন না বলে ১৫০ জনের বেশি লেখক ও কলাম লেখক এক অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

ওই অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষরকারীরা লিখেছেন, নিউইয়র্ক টাইমস যদি তাদের পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশনের জন্য দায় স্বীকার না করে এবং গাজায় চালানো ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সত্যিকারের ও নৈতিক প্রতিবেদন না দেয়, তাহলে কোনো ব্যক্তির লেখা নিবন্ধ সংবাদকক্ষ বা সম্পাদক পর্ষদের জন্য কোনো ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে কাজ করবে না। বরং তাদের এই অসদাচরণ চালিয়ে যাওয়ারই অনুমতি দেবে।

লেখকেরা আরও যোগ করেছেন, ‘আমরা কেবল আমাদের শ্রম প্রত্যাহারের মাধ্যমেই সেই প্রভাবশালী কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি, যা টাইমস দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মিথ্যাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ব্যবহার করে আসছে।’

চিঠিতে রিমা হাসান, চেলসি ম্যানিং, রাশিদা তালিব, স্যালি রুনি, ইলিয়া সুলেইমান, গ্রেটা থুনবার্গ, ভিয়েট থান এনগুয়েন এবং ডেভ জিরিন-এর মতো কয়েক ডজন সুপরিচিত কর্মী, শিল্পী ও মার্কিন রাজনীতিবিদ স্বাক্ষর করেছেন।

চিঠিতে লেখকেরা আরও লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখকদের প্রতি আমাদের কর্তব্য হলো, নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা এবং তাদের ভুলগুলো স্বীকার করতে বাধ্য করা। যাতে গণহত্যা, নির্যাতন ও বাস্তুচ্যুতিকে তারা কখনো বৈধতা দিতে না পারে।’

নিউইয়র্ক টাইমস বর্জনে যোগ দেওয়া অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন ক্রিস হেজেস, মার্ক ল্যামন্ট হিল, নুরা ইরাকাত, বিজয় প্রশাদ, মারিয়াম কাবা, রবিন ডি জি কেলি, মোহাম্মদ আল-কুরদ, সুসান স্ট্রাইকার, জিয়া টোলেন্টিনো, ইভ এল ইউইং, ডিন স্পেড, নাইল ফোর্ট, সুসান আবুলহাওয়া এবং রশিদ খালিদি।

তিন দাবি

স্বাক্ষরকারীরা নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছেন—

১. পত্রিকাটি যেন ‘ফিলিস্তিনবিরোধী পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে পর্যালোচনা করে’ এবং ফিলিস্তিন কভারেজের জন্য নতুন সম্পাদকীয় মান তৈরি করে। স্বাক্ষরকারীরা নতুন সোর্সিং (উৎস যাচাই) ও রেফারেন্স পদ্ধতি, সেই সঙ্গে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বর্ণনা দিতে পত্রিকার ব্যবহৃত শব্দভান্ডারের জন্য একটি নতুন স্টাইল গাইড চেয়েছেন। চিঠিতে এমন সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে, যাঁরা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন।

২. লেখকেরা নিউইয়র্ক টাইমসকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘Screams Without Words’ (স্ক্রিমস উইদাউট ওয়ার্ডস) শিরোনামের একটি প্রবন্ধ প্রত্যাহার করতে বলেছেন। ওই প্রবন্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি নারীদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন করেছে।

লেখকেরা লিখেছেন, ওই প্রবন্ধটি মূলত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি স্পেশাল ফোর্সের একজন প্যারামেডিকের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে লেখা হয়েছিল। অথচ প্রবন্ধটিতে যে কিবুৎসে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়, পরে সেখানকার একজন মুখপাত্র নিউইয়র্ক টাইমসের অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।

তাঁরা আরও লিখেছেন, ওই প্রতিবেদনের লেখকদের মধ্যে একজন আনাত শোয়ার্টজকে পরে পত্রিকাটি তদন্তের আওতায় আনে। কারণ জানা যায়, তিনি গাজাকে ‘কসাইখানায়’ পরিণত করার আহ্বান জানানো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি পোস্টে লাইক দিয়েছিলেন।

প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার আগে হামলায় নিহত কথিত যৌন নিপীড়নের শিকার মেয়েদের পরিবারের সদস্যরা বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, যা গল্পের দাবিগুলোর সঙ্গে মেলেনি। তবে সেই সাক্ষাৎকারগুলোর কোনোটিই নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়নি।

৩. চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ডকে ইসরায়েলের ওপর মার্কিন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানানোর দাবি করেছেন।

স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন, তাঁদের দাবিগুলো ‘অসম্ভব বা অযৌক্তিক’ নয়। লেখকেরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, পত্রিকাটি ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে এইডস সংকটের সময় তার স্টাইল গাইড হালনাগাদ করেছিল এবং ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকে হামলার পর ভুল সংবাদের জন্য ক্ষমাও চেয়েছিল।

লেখকেরা চিঠিতে আরও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক টাইমসের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী কোনো সংবাদপত্র নেই। পশ্চিমা বিশ্বের সংবাদকক্ষগুলোতে সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা এই পত্রিকার কভারেজ অনুসরণ করেন। এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের “কাগজের দলিল” হিসেবে গণ্য করা হয়।’

স্বাক্ষরকারীরা আরও যোগ করেছেন, ‘ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধনে যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে নিউইয়র্ক টাইমস দখলদার বাহিনীর যুদ্ধাপরাধকে আড়াল করেছে, ন্যায্যতা দিয়েছে এবং সরাসরি অস্বীকার করেছে। এভাবে তারা ইসরায়েলি সরকার ও সামরিক বাহিনীর জন্য মাইক হিসেবে কাজ করার দশকব্যাপী অভ্যাস বজায় রেখেছে।’

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ