টেইলর সুইফটের অ্যালবাম আসবে আর রেকর্ড হবে না, তাই কি হয়! যে পূর্বাভাস ছিল, মুক্তির পর সেটা সত্যি করে শুরু হয়েছে টেইলর সুইফট-ঝড়। গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে গায়িকার দ্বাদশ অ্যালবাম ‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’। মুক্তির পর থেকেই অ্যালবামটি গড়ছে একের পর এক রেকর্ড।
রেকর্ড বিক্রি
অ্যালবামটি মুক্তির পর থেকেই রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে। প্রথম তিন দিনেই এটি বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার কপি, যা তাঁর আগের দুই অ্যালবাম ‘দ্য টর্চারড পোয়েটস ডিপার্টমেন্ট’ ও ‘মিডনাইটস’-এর প্রথম সপ্তাহের বিক্রিকে ছাড়িয়ে গেছে। গত বুধবার বিলবোর্ড জানিয়েছে, মুক্তির প্রথম পাঁচ দিনেই অ্যালবামটি বিক্রি ও স্ট্রিমিং মিলিয়ে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউনিটের বেশি বিক্রি হয়েছে। এর মাধ্যমে সুইফট ভেঙেছেন অ্যাডেলের বহুদিনের রেকর্ড। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রথম সপ্তাহে অ্যাডেলের অ্যালবাম ২৫ বিক্রি হয়েছিল ৩ দশমিক ৪৮২ মিলিয়ন ইউনিট, যা প্রায় এক দশক ধরে অক্ষত ছিল।
সুইফট এর আগে নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন। তাঁর অ্যালবাম ‘দ্য টর্চারড পোয়েটস ডিপার্টমেন্ট’ (২০২৪) মুক্তির প্রথম সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ইউনিট, আর এখন মাত্র পাঁচ দিনেই তিনি ৬ লাখ ইউনিটের ব্যবধানে সেটি ছাড়িয়ে গেছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সুইফটের এই বিক্রির সাফল্যের পেছনে আছে তাঁর প্রি-অর্ডার কৌশল ও ভক্তদের জন্য বিশেষ সংস্করণ প্রকাশের নীতি। অ্যালবাম মুক্তির পর তিনি একের পর এক সিডি ও ডিজিটাল সংস্করণ প্রকাশ করেছেন, যেখানে ছিল বিশেষ অ্যাকুস্টিক ট্র্যাক।
বিশ্লেষকদের অনুমান, চলতি সপ্তাহ শেষেই ‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’ অ্যালবামের বিক্রি চার মিলিয়ন ইউনিটেও পৌঁছাতে পারে।
কেবল অ্যালবাম বিক্রি নয়, স্ট্রিমিংয়েও রেকর্ড গড়েছে ‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’; স্পটিফাই, অ্যাপল মিউজিক ও অ্যমাজন মিউজিক প্ল্যাটফর্মে চলতি বছরের সর্বোচ্চ স্ট্রিমিংয়ের রেকর্ড এখন সুইফটের দখলে। তবে স্ট্রিমিংয়ের পরিসংখ্যান কোনো প্ল্যাটফর্মই প্রকাশ করেনি।
অ্যালবামের বিষয়বস্তু
সুইফটের ১২তম অ্যালবামটি লেখা ও রেকর্ড করা হয়েছে গত বছর ইরাস ট্যুরের সময়। গত বছর শেষ হওয়া ট্যুরটি টিকিট বিক্রিতে এনেছিল প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার, যা সংগীত ইতিহাসের বিরল ঘটনা। চলতি বছরই তিনি নিজের পুরোনো সব গানের স্বত্ব ফিরে পেয়েছেন। এর মধ্যেই এনএফএল সুপার বোল চ্যাম্পিয়ন প্রেমিক ট্রাভিস কেলসির সঙ্গে বাগ্দানও সেরেছেন। ‘এ অ্যালবাম এসেছে আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় আর নাটকীয় জায়গা থেকে। সেই উদ্দীপনা সংগীতেও চলে এসেছে,’ কেলসি ও তাঁর ভাইয়ের সঞ্চালিত নিউ হাইটস পডকাস্টে বলেছিলেন টেইলর।
কেলসির সঙ্গে প্রেমের পাশাপাশি মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির মজার ও তিক্ত গল্পও উঠে এসেছে। মুক্তির পর অ্যালবামটি ব্যাপক বিক্রি হলেও সমালোচকদের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। অ্যালবামে অতিথি শিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন সাবরিনা কার্পেন্টার, যিনি ইরাস ট্যুরের কিছু শোতেও সুইফটের সঙ্গে ছিলেন। এবারের অ্যালবামটি তাঁর সাম্প্রতিক কয়েকটি কাজ থেকে একেবারেই আলাদা। মহামারির সময়ে বের করা লোকগানঘেঁষা ফোকলোর আর এভারমোর বা পরের সব অ্যালবাম খানিকটা সরে গিয়ে ‘শোগার্ল’ বর্ণিল আর মঞ্চকেন্দ্রিক।
অ্যালবামে সুইফট আবার এক হয়েছেন সুইডিশ হিটমেকার ম্যাক্স মার্টিন আর শেলব্যাকের সঙ্গে, যাঁরা তৈরি করেছিলেন সুইফটের ‘শেক ইট অফ’ আর ‘২২’-এর মতো হিট গান।
প্রমোশনাল ছবিগুলোতেও দেখা যাচ্ছে ঝলমলে, গ্ল্যামারাস কস্টিউমে টেইলরকে, যেখানে মূল রং আবারও কমলা।
প্রেক্ষাগৃহেও ঝড়
শুধু অ্যালবাম নয়, অ্যালবামটি নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘দ্য অফিশিয়াল রিলিজ পার্টি অব আ শোগার্ল’ও বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে। মুক্তির তিন দিনে এটি আয় করেছে ৪৬ মিলিয়ন ডলার। সিনেমাটি মূলত ৮৯ মিনিটের একটি বিশেষ ইভেন্ট, যেখানে থাকছে নতুন মিউজিক ভিডিও ও এর পেছনের গল্প। অবাক করার মতো বিষয় হলো, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ঘোষণা করা হয়েছিল এই ইভেন্টের কথা, আর প্রচারণা হয়েছে কেবল সুইফটের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই।