বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
No menu items!
বাড়িঅর্থনীতিঝিনুক কুড়িয়ে জীবন চলে যে গ্রামের মানুষের

ঝিনুক কুড়িয়ে জীবন চলে যে গ্রামের মানুষের

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী। প্রতিদিন ভোর সকাল থেকেই যমুনা নদীতে চলে ঝিনুক তোলার প্রতিযোগিতা। এই নদীতে কেউ ডুব দিয়ে, কেউবা মাথা উঁচু করে পানিতে দুই হাত ডুবিয়ে খুঁজে চলেছেন। যখন নদীর পানি কমে যায়,তখন  অল্প পানিতে অধিক ঝিনুক পাওয়া সম্ভব । প্রতিদিন সকালে এসব ঝিনুক তুলছেন আলাদীপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী-পুরুষরা। যখন অনেকটা সময় পানিতে থাকা কষ্টকর হয় তখন রোদে গাঁ শুকিয়ে আবারও পানিতে নামছেন। এভাবে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নারী-পুরুষরা নদী থেকে ঝিনুক খুঁজছেন। আর এই ঝিনুক কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন শতাধিক আদিবাসী পরিবার।

প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নে ছোট যমুনা নদীতে। এরা সবাই আলাদীপুর ইউনিয়নের সূর্যপাড়া আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দা।
বিরামপুরের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে শামুক ও ঝিনুক কিনে নেয় এসব আদিবাসীদের কাছ থেকে।
ঝিনুক খুঁজতে আসা কয়েকজন জানালেন, এখন নদীর পানি কমে গেছে। অল্প পানিতে প্রচুর ঝিনুক পাওয়া যায়। এসব ঝিনুক পানি থেকে তুলে এনে বিক্রি করে সংসার চালান।
ঝিনুক কুড়ান এমন একজন হলেন এডওয়ার্ড কিসকু। তিনি জানান, ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বাড়ির পাশে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রেখে দিই। এভাবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত তাজা রাখা যায়। এরপর ঝিনুক ভেঙে ভেতরের নরম অংশটুকু রান্না করে খাই। খোলসগুলো ১০ টাকা কেজি এবং ৪০ টাকা ডালি হিসেবে বিক্রি করি। খাবারের পাশাপাশি আমাদের উপার্জনও হয়। প্রতিদিন অন্তত ৭০ থেকে ৮০ কেজি ঝিনুক সংগ্রহ করতে পারি। এই কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় ঝিনুকের খোলসে আমাদের হাত-পা কেটে আহত হই।
ক্রিসটিনা টুডু নামে এক আদিবাসী নারী জানালেন, এলাকার সবাই মিলে ঝিনুক কুড়াই। ‘আমাদের কুড়ানো ঝিনুক থেকে খাবার পাচ্ছি এবং খোলসগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছি। এতে করে ভালো আয় হচ্ছে।
একই কথা বলেন মিলতি স্বরেন, লিনা হেমরম ও শান্তি মুরমু। তারা জানালেন, বছরে তিন মাস নদী-নালা খাল-বিলে পানি কমে যায়। তখন ঝিনুক তুলতে সুবিধা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঝিনুক তুলতে পারলে ৬ থেকে ৭শ টাকাও আয় করা যায়। ঝিনুক ব্যবসায়ী জানান, ঝিনুক প্রতি মণ ৩৫০ টাকা। এটা দিয়ে চুন তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাশেদা বেগম বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শামুক-ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ঝিনুক পানি দূষণমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এ জন্য এদের প্রকৃতির ফিল্টার বলা হয়। বণ্যপ্রাণী নিধন আইনে প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে শামুক-ঝিনুক আহরণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবৈধভাবে এ ব্যবসা করলে কিংবা প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরণ করলে আইন অনুযায়ী এর শাস্তি হওয়া উচিত।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ