বুধবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৫
No menu items!
বাড়িঅর্থনীতিগাজীপুরে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘ভূতুড়ে ফুটওভার ব্রিজ’ পা রাখে না কেউ

গাজীপুরে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘ভূতুড়ে ফুটওভার ব্রিজ’ পা রাখে না কেউ

গাজীপুরের শ্রীপুর রেলস্টেশনের পাশে কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটি এখন কার্যত পরিত্যক্ত। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় এটি একপ্রকার ‘ভূতুড়ে ব্রিজে’ পরিণত হয়েছে। ভুলেও পা পড়ে না সাধারণ মানুষের। বরং ব্রিজটি এখন ভবঘুরে ও মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ব্রিজটির সিঁড়ি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রধান সড়ক ডিবি রোডের উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে করে অবৈধ দোকানদারদের সুবিধা হয়। ফলে অনেকটা ঘুরে যেতে হয় বলে পথচারীরা ব্রিজ ব্যবহার করতে চান না।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান,২০১৫ সালে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ব্রিজটি উদ্বোধনের পর কয়েকদিন ব্যবহার হলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পথচারীদের আগ্রহ হারিয়ে যায়। বর্তমানে ব্রিজটির সিঁড়িগুলো জায়গায় জায়গায় ভাঙা, রেলিং নষ্ট, এবং রাতে অন্ধকারে পরিণত হয় ভয়ঙ্কর পরিবেশে। ফলে অনেকেই এটিকে ‘ভূতুড়ে ব্রিজ’ বলেই ডাকেন।
রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এক দোকানদার বলেন, “রাতে কেউ এই ব্রিজে ওঠে না। আলো নেই, নোংরা আর ভয় লাগে। অনেক সময় মাদকাসক্ত লোকজন এখানে আড্ডা দেয়।”

জানা যায়,ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে প্রতিদিন ১২ জোড়া বা ২৪টি ট্রেন চলাচল করে। এতে দিনে ২৪ বার শ্রীপুর পৌর শহরের রেলগেটটি বন্ধ থাকে। ফলে প্রতিবারই কয়েক হাজার পথচারী ও শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। বিশেষ করে বিপাকে পড়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই এলাকায় রয়েছে সরকারি কলেজ, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বেসরকারি বালিকা বিদ্যালয়, বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অন্তত ২০টি কিন্ডারগার্টেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই রেলগেট দিয়ে চলাচল করে। অথচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার না হওয়ায় তাদের ঝুঁকি নিয়েই রেললাইন পার হতে হয়।

জানা গেছে, ব্রিজ নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্টরা কিছু দোকানদারের সঙ্গে আঁতাত করে সিঁড়ি ঘুরিয়ে দেন, যাতে তারা ব্রিজের নিচে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে রাখতে পারেন। এখন সেই দোকানগুলো রীতিমতো জমজমাট। রয়েছে সেলুন, ওষুধের দোকান, মোবাইল ও স্টেশনারি দোকান, এমনকি খাবারের দোকানও। ফলে ব্রিজের প্রকৃত উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে গেছে।
শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসেন দীপু বলেন, “স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন অফিস রেলস্টেশনের পূর্ব পাশে অবস্থিত। কিন্তু সিঁড়ি উল্টো দিকে হওয়ায় কেউ ব্রিজ ব্যবহার করতে চান না।”
শ্রীপুর সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল হাসান বলেন, “ব্রিজটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী রেলগেট দিয়ে যাতায়াত করে। সিঁড়ি ডিবি রোডের উল্টো দিকে থাকায় এটি এখন অচল।”
শ্রীপুর বাজার ব্যবসায়ী নিরাপত্তা কমিটির সভাপতি আরিফ সরকার জানান, “সিঁড়ি ঘুরিয়ে ডিবি রোডের সঙ্গে সংযোগ দিলে সাধারণ মানুষের চলাচল সহজ হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অবকাঠামো তৈরি করলেই হবে না, ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা এবং জনসচেতনতা তৈরি করাও জরুরি। পাশাপাশি ব্রিজের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত না হলে জনগণ ব্যবহার করবে না এটা আগে থেকেই জানা কথা।
শ্রীপুর পৌরসভার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ব্রিজটি জনগণকে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করার জন্যই নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে ব্যবহার না হওয়ায় আমরাও হতাশ। পুনরায় আলো এবং সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
শ্রীপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, “ব্রিজের নিচে পশ্চিম পাশে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের দোকানগুলো বৈধ। তবে পূর্ব পাশে ব্রিজের নিচের দোকানগুলো অবৈধ। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখবে।”

স্থানীয়দের দাবি পথচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একটাই দাবি ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়ি ঘুরিয়ে ডিবি রোডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হোক। তবেই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই অব্যবহৃত ব্রিজটি কার্যকর হবে এবং শহরবাসীর দুর্ভোগ কমবে।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ