দেশের শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত কমছে লেনদেনের গতি। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এতে দেড় মাসের মধ্যে সব থেকে কম লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস ঢালাও দরপতনসহ টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারের দরপতন হলো। আর শেষ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ৭ কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে।
এর আগে, গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরতপন হয়। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৬৮টির স্থান হয় দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমে ৩০৬টির। আর ২৩টির দাম অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় ৪ দশমিক ৫০ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান ছিল।
অন্যভাবে বলা যায়, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসও শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুতে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যায়। কয়েক দফায় সূচকের উত্থান-পতন হয়। তবে লেনদেনের শেষদিকে ঢালাও দরপতন হয়। এতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
ডিএসইতে দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৩টির। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে, ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৮টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৫৯টির দাম কমেছে এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে ৬৯টির দাম কমেছে এবং ৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৮টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৫টির এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১২টির দাম কমেছে এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৩৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৭১ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৪৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬২১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৭৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত ৩ জুলাইয়ের পর ডিএসইতে সব থেকে কম লেনদেন হলো।
এই লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সামিট এলায়েন্স পোর্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। ২২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, টেকনো ড্রাগস, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক সার্ভিসেস এবং ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১২০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫১টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।