বৃহস্পতিবার, জুন ১২, ২০২৫
No menu items!
বাড়িঅর্থনীতিরাঙামাটির ভাসমান পাহাড়ি ফলের হাটে জমজমাট বিকিকিনি:কোটি টাকার ফল বিক্রি

রাঙামাটির ভাসমান পাহাড়ি ফলের হাটে জমজমাট বিকিকিনি:কোটি টাকার ফল বিক্রি

 

কাক ডাকা ভোর থেকেই রাঙামাটির বনরূপার সমতাঘাটে পাহাড়ের দুর্গম গ্রাম থেকে ফল বোঝাই ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভিড়তে শুরু করে। একের পর এক ইঞ্জিনচালিত নৌকায় জমজমাট হয়ে উঠে ভাসমান হাট। তাতে বোঝাই থাকে বিভিন্ন ধরনের পাকা মৌসুমি ফল। মূলত সকালের হাট ধরতেই তোড়জোড় শুরু করেন ফল নিয়ে ঘাটে আসা বিক্রেতারা। দল বেঁধে উপস্থিত থাকেন ক্রেতারাও। নৌকা ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি। এ সময় জমজমাট হয়ে উঠে মৌসুমি  ফলের বিকিকিনি। রাঙ্গামাটির ভাসমান হাট সমতাঘাটে
আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু ও কলাসহ বেশকিছু দেশীয় ফলে সবসময় ভরপুর থাকে। প্রতিদিন এখানে ভিড় জমায় পাইকাররা। গড়ে প্রতিদিন কোটি টাকার ফল বিক্রি হয় এ হাটে। হাটবারে সেটি বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ।এখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাসমান প্রতিটি নৌকা আম, লিচু, আনারসে ঠাসা। আশপাশের পাহাড়ি এলাকা থেকে এসব ফল ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সমতাঘাটে নিয়ে এসেছেন চাষিরা। ঘাটে নৌকা আসার সঙ্গে সঙ্গে পাইকারদের সঙ্গে তাদের দর কষাকষির পর্ব শুরু হয়।  পাহাড়ের দুর্গম গ্রাম থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নানা রকমের ফল নিয়ে আসেন চাষিরা। ভোর থেকে শুরু হয় বেচাকেনা। নৌকা ঘাটে ভিড়লেই পাইকাররা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। দরদাম শেষে নৌকায় থাকা ফল উঠে যায় ট্রাকে। পরের গন্তব্য ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, এবার জেলায় তিন হাজার ৬২৮ হেক্টর জমিতে আম, তিন হাজার ৩৭৩ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু, দুই হাজার ৫৩৭ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছ। এর মধ্যে আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ২০০ মেট্রিকটন, কাঁঠালের লক্ষ্যমাত্রা ৯৮ হাজার মেট্রিকটন, লিচু ১৩ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন এবং আনারস ৬৩ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন।
হাটে আসা ব্যবসায়ী ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর আনারস ও কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। লিচু ও আমের ফলন কিছুটা কম। পাহাড়ের আনারসের একটা সুনাম রয়েছে সারাদেশে। ভোক্তাদের কাছে চাহিদা রয়েছে এখানকার আনারসের। পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত সব ফলেরই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

হাটে নৌকায় করে কাঁঠাল নিয়ে আসেন বন্ধুকভাঙ্গা ইউনিয়নের সমীরণ চাকমা। তিনি জানান, ‘কাঁঠাল হলো সব চাইতে সস্তা ফল। আমার বাড়ির আশপাশে কিছু গাছে প্রতিবছরই ভালো ফলন হয়। সেগুলা বাজারে এনে বিক্রি করি। আজ প্রতিপিস কাঁঠাল ৪০ টাকা করে বিক্রি করেছি। হাটে ২০০ পিস বিক্রি করেছি। কাঁঠাল উৎপাদনে কোনো খরচ নাই। শুধুমাত্র পরিবহন খরচ বাদ দিলে বাকিটা লাভ থাকে। তবে আম ও লিচুর ভালো দাম আছে বাজারে।’
হাটে ফল কিনতে আসা ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ‘এবার আম ও লিচুর দাম অনেক বেশি। দেশি লিচু ১০০ পিস ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি কিনতে হচ্ছে। এছাড়া চায়না থ্রি জাতের লিচুও পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। দেশি আম ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে আরও কিছুদিন পর আম ও লিচুর দাম কমবে। বিশেষ করে আম্রপালি ও রাঙ্গুই জাতের আম এখনো বাজারে আসেনি। এ আমের চাহিদা রয়েছে।’
নানিয়ারচর থেকে আনারস নিয়ে আসা মনিময় চাকমা বলেন, ‘আনারসের ফলন ভালো হয়েছে এবার। দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারি দরে প্রতিপিস আনারস ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আমি এখন পর্যন্ত তিন নৌকা আনারস বিক্রি করেছি। যেখানে ছয় হাজার পিস আনারস ছিল। উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে আমার ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। বাগানে আরও কিছু আনারস এখনো আছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের মাটির গুণগত মানের কারণে এখানে উৎপাদিত ফলের স্বাদ ও মান অনেক ভালো। পাহাড়ে কলা ও পেঁপে সারাবছরই পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত কাঁঠাল, আনারস, লিচু সারাদেশে যাচ্ছে। তিন পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হয় তার বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।’

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ