২০০০ সালের ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন’ সংশোধন করে ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ আমানতকারীর ওপর এর প্রভাব পড়বে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আমানতকারীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পরিবর্তন নিচে তুলে ধরা হলো—
১. আমানত সুরক্ষা সীমা দ্বিগুণ হয়ে ২ লাখ টাকা
এখন থেকে প্রতি আমানতকারীর জন্য সুরক্ষিত আমানতের সীমা ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, এতে ব্যাংক হিসাবের ৯৩ শতাংশই সুরক্ষার আওতায় আসবে। ফলে ছোট ও মাঝারি আমানতকারীদের জন্য এটি একটি বড় নিশ্চয়তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২. দ্রুত অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা
আগে কোনো ব্যাংক সমস্যায় পড়লে আমানতকারীদের সুরক্ষিত অর্থ পেতে ১৮০ দিন পর্যন্ত সময় লাগত। নতুন আইনে এই সময়সীমা কমে মাত্র ১৭ কার্যদিবসে নামানো হয়েছে। এর ফলে বিপদে পড়া ব্যাংকের গ্রাহকরা অনেক দ্রুত তাদের বীমাকৃত অর্থ ফেরত পাবেন।
৩. আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরাও আসছে আওতায়, তবে
প্রথমবারের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদেরও ডিপোজিট সুরক্ষা আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে এ সুরক্ষা কার্যকর হবে ২০২৮ সালের জুলাই থেকে। ততদিন পর্যন্ত প্রায় ৪.৮ লাখ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবের ৫০ হাজার কোটি টাকার আমানত এই সুরক্ষার বাইরে থাকবে।
৪. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আলাদা সুরক্ষা তহবিল
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি পৃথক সুরক্ষা সুরক্ষা তহবিল গঠন করা হবে। প্রতিটি তহবিল স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হবে নতুন আমানত সুরক্ষা কর্তপক্ষের তত্ত্বাবধানে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে কাজ করবে। ঝুঁকিভিত্তিক অবদানের নীতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২০২৮ সালের জুলাইয়ের মধ্যে তাদের প্রদত্ত মূলধনের ০.৫ শতাংশ এই তহবিলে জমা দিতে হবে।
৫. একীভূত ব্যাংক ও আর্থিক স্থিতিশীলতায় সুরক্ষা
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যাংক একীভূতকরণের সময় শর্তসাপেক্ষে আর্থিক সহায়তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে বিদ্যমান তহবিল থেকে ১২,০০০ কোটি টাকা ব্যবহার করা হবে পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক পুনঃমূলধনীকরণের জন্য। এছাড়া সুরক্ষা তহবিলের অর্থ শুধুমাত্র নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগ করা যাবে, যাতে আমানতকারীদের আস্থা বজায় থাকে।
নতুন ডিপোজিট সুরক্ষা আইন ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের সুরক্ষা কার্যকর হতে এখনো তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে।