বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫
No menu items!
বাড়িঅর্থনীতিপেঁয়াজের দামে হঠাৎ মৌসুম শেষের অস্থিরতা

পেঁয়াজের দামে হঠাৎ মৌসুম শেষের অস্থিরতা

চলতি বছর বাজারে প্রায় পুরোটাই চাহিদা মিটিয়েছে দেশীয় পেঁয়াজ। তবে প্রতিবারের মতো এবারও মৌসুমের শেষ সময়ে এসে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। সরবরাহ খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর পুরোটাই দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে ছিল। এখন মৌসুম শেষ পর্যায়ে হওয়ায় দাম বাড়ছে। নতুন ফলন বাজারে আসা পর্যন্ত বাজারে অস্থিরতা থাকবে। তবে আমদানির সুযোগ দিলে এ দাম কমে যাবে।

 

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, আড়তগুলোতে আনুপাতিক হারে পেঁয়াজ কম। অনেক আড়ত ফাঁকা। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলের হিমাগারগুলো থেকে চট্টগ্রামে পেঁয়াজ আসছে না।

খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১৫-১৮ ট্রাক পেঁয়াজ আসে। এখন সেখানে ৩-৪ ট্রাকে নেমেছে। যেসব জেলা থেকে পেঁয়াজ আসে সেখানেও মজুত কমে গেছে। ফলে দাম বাড়ছে।- ব্যবসায়ী আবুল বশর

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে ৩২ লাখ টনের মতো। চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ দেশে উৎপাদিত হয়। উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে বড় অংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। বিগত বছরগুলোতে চাহিদার অবশিষ্ট পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করা হতো। পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে পাকিস্তান, চায়না থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করেন অনেকে।

 

 

আড়তদাররা বলছেন- দেশের পাবনা, রাজবাড়ী, নাটোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এসব জেলার কৃষকদের হাতে এখনো কিছু পেঁয়াজ রয়েছে। তবে মৌসুমের শেষ সময় হওয়ায় ওখানকার ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন।

 

ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, গত বছরের একই সময়ে ভারতীয় পেঁয়াজও বাজারে ছিল। কিন্তু তখনও দাম এখনকার চেয়ে আরও বেশি ছিল। মূলত এখন পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। ডিসেম্বরের শুরু থেকে নতুন ফলন বাজারে এলে দাম ধীরে ধীরে কমে যাবে।

বর্তমানে বাজারে সবগুলোই দেশি পেঁয়াজ। মৌসুমের শেষ সময় হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম। তাই দাম বাড়ছে। পুরো নভেম্বর মাসে দাম কমার আর সম্ভাবনা নেই। তবে সরকার দেশের বাইরে থেকে আমদানির জন্য আইপি (আমদানি অনুমতি) দিলে বাজারে দাম কমে যাবে।- মেসার্স জামেনা ট্রেডিংয়ের পরিচালক মো. আজগর হোসেন

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, ঢাকা মহানগরীর খুচরা বাজারগুলোতে মঙ্গলবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে একই পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১৩০-১৫০ টাকা।

মধ্যম চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ-রসুনের আড়তদার ব্যবসায়ী বশর অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর  বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১৫-১৮ ট্রাক পেঁয়াজ আসে। এখন সেখানে ৩-৪ ট্রাকে নেমেছে। যেসব জেলা থেকে পেঁয়াজ আসে সেখানেও মজুত কমে গেছে। ফলে দাম বাড়ছে।’

 

তিনি বলেন, ‘এটি স্বাভাবিক বিষয়। প্রতিবছর এই সময়টাতে পেঁয়াজের দাম বাড়তি থাকে। বর্তমানে আকারভেদে আড়তে কেজিতে ৮০-১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও কেজিতে ২০ টাকার মতো কম ছিল। আজও চট্টগ্রামের চেয়ে রাজবাড়ী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার মোকামগুলোতে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তি। আমাদের কেনা আগের হওয়ায় বিক্রি করে ফেলছি।’

 

খাতুনগঞ্জের মেসার্স জামেনা ট্রেডিংয়ের পরিচালক মো. আজগর হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে সবগুলোই দেশি পেঁয়াজ। মৌসুমের শেষ সময় হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম। তাই দাম বাড়ছে। পুরো নভেম্বর মাসে দাম কমার আর সম্ভাবনা নেই। তবে সরকার দেশের বাইরে থেকে আমদানির জন্য আইপি (আমদানি অনুমতি) দিলে বাজারে দাম কমে যাবে।’

 

তিনি বলেন, ‘এবার পুরো বছর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। দাম বাড়লেও এসব টাকা আমাদের কৃষকদের হাতে যাচ্ছে। কৃষকরা লাভবান হলে তারা আরও বেশি চাষে উৎসাহী হবেন। এটা ইতিবাচক। ডিসেম্বর মাস ঘনিয়ে এলে মুড়িকাটা (নতুন ফলন) পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে। তখন দাম কমে যাবে।’

মঙ্গলবার বিকেলে খাতুনগঞ্জের লামার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস  বলেন, ‘বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এই মুহূর্তে সরকার আমদানির অনুমতি দিলে বাজারে দাম কমে যাবে। তবে আমদানির অনুমতি দিলেও ভারত বাদে অন্য দেশ থেকে আনতে আনতে বাজারে নতুন পেঁয়াজ চলে আসবে।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ