বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৬, ২০২৫
No menu items!
বাড়িঅর্থনীতিপাহাড়ে সোনালী আভা ছড়াচ্ছে জুমের পাকা ধান

পাহাড়ে সোনালী আভা ছড়াচ্ছে জুমের পাকা ধান

পাহাড়ের ঢালে এখন সোনালি রঙের ছড়াছড়ি। বান্দরবানে যুগ যুগ ধরে চলে আসা জুম চাষের পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। সময়মতো বৃষ্টিপাত ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর জুমের ফলন বেশ আশানুরূপ হয়েছে। জুমের এই সোনালি ফসল ঘরে তোলার মধ্য দিয়ে পাহাড়ি জনপদে চলছে উৎসবের আমেজ।

পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা প্রাচীন সনাতন পদ্ধতিতে পাহাড়ের ঢালু জমিতে কৃষিকাজ করেন, যা জুম নামে পরিচিত। সাধারণত এপ্রিল মাসে বীজ বপনের পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে কঠোর পরিশ্রমের ফসল ঘরে তোলার পালা শুরু হয়। জুমের জমিতে শুধু ধানই নয়, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, মারফা, মরিচ, টক পাতা, চিনালসহ নানা ধরনের সাথী ফসলও আবাদ করা হয়।

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাছে জুম চাষ শুধু কৃষিকাজ নয়, এটি তাদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত এক ঐতিহ্য।

প্রতি বছর জুমিয়ারা দুটি প্রধান পূজা পালন করেন—“খ্যং সাঙ সহ্গং” এবং “বঙ্ মাহ্”।

খ্যং সাঙ সহ্গং পূজা অনুষ্ঠিত হয় জুমের ধান গাছে শিষ ধরতে শুরু করলে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ফসলের প্রাচুর্য ও শস্যের সমৃদ্ধি কামনা এবং পোকামাকড়, বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষার প্রার্থনা করা। বঙ্ মাহ্ পূজা পালন করা হয় ধান কাটার সময় বা কাটার ঠিক আগে।

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, এই পূজা তাদের কৃষিকাজে এক আধ্যাত্মিক ঢালস্বরূপ ভূমিকা পালন করে।

বান্দরবান সদর থেকে রোয়াংছড়ি যাওয়ার পথে রাস্তার দু’পাশে এখন ধান পাকার উৎসব চলছে। জুমিয়ারা কেউ স্বপরিবারে, আবার কেউ শ্রমিকদের নিয়ে ভোর থেকেই ‘থুরুং’ (বেতের তৈরি ঝুড়ি) মাথায় ও হাতে কাঁচি বা দা নিয়ে দল বেঁধে ধান কাটায় ব্যস্ত। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় দেখা যাচ্ছে অস্থায়ী জুমঘর, যেখানে বিশ্রাম ও উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ করা হয়।

জুমচাষী মংক্যপ্রু মারমা বলেন, এবার সময়মতো বৃষ্টি ও রোদ মিলেছে, তাই ফলনও ভালো হবে আশা করছি।

আরেক জুম চাষি উখ্যাইচিং মারমা জানান, তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন এবং প্রতি দুই বিঘায় ১২০ আড়ি ধান পাওয়ার আশা করছেন, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এমএম শাহ নেয়াজ বলেন, এই মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জুমের ফলন ভালো হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ মৌসুমে প্রায় ৭,৩০০ হেক্টর জমিতে জুম আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৬৬ টন।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ