গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজবর্ধন খামারে ফুটে উঠেছে বাংলা মসলিন প্রস্তুতির অপরিহার্য উপকরণ ফুটি কার্পাস। দীর্ঘদিন বিলুপ্তপ্রায় এই গাছকে কেন্দ্র করে আবারও জেগে উঠছে মসলিন পুনরুদ্ধারের আশাবাদ।
প্রায় দুই হাজার বছর আগে রোমান লেখক পেট্রোনিয়াস তাঁর স্যাটিরিকান গ্রন্থে মসলিনকে আখ্যায়িত করেছিলেন “হাওয়ায় বোনা কাপড়” হিসেবে। একইভাবে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ বলেছিলেন, মসলিন যেন “ভোরের কুয়াশা দিয়ে বোনা”। এই কাব্যময় বর্ণনার পেছনে কাজ করত যে অতুলনীয় সুতা, তা তৈরিই হত ফুটি কার্পাসের সূক্ষ্ম তুলা থেকে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানলেখক আবদুল গাফফার রনির সূত্রে জানা যায়, কাপাসিয়ার হাইলজোর গ্রামে কৃষক তাজউদ্দিনের বাড়িতে এই বিরল গাছ রয়েছে। তবে অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকেরা দেখতে পান শ্রীপুরেই তুলা গবেষণা খামারে ফুটি কার্পাসের চারটি ভিন্ন জাতের চাষ চলছে। খামারের কটন অ্যাগ্রোনমিস্ট মো. আবদুল ওয়াহাব জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া, দিনাজপুর, বাগেরহাট এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা চারটি জাতের চারা গত বছরের ২৯ আগস্ট গবেষণার উদ্দেশ্যে লাগানো হয়। প্রতিটি জাতের ৪০টি করে গাছ রয়েছে। এক বছরে গাছগুলো লম্বায় মানুষের দ্বিগুণ হয়ে ছোট বৃক্ষের রূপ ধারণ করেছে।
সকালে হালকা হলুদ ও বেলা বাড়লে গোলাপি হয়ে ওঠা ফুল, শক্ত বাকলধারী ডালপালা এবং ইতোমধ্যে ধরতে শুরু করা তুলার গুটি গবেষকদের উৎসাহিত করছে। কিছু গাছ দুই দফায় ফুল দেয় বলে জানান ওয়াহাব। তিনি বলেন,“ফুটি কার্পাসগাছ প্রায় ১৫ বছর বাঁচে, তুলার আঁশ খাটো হলেও এটি শক্ত, উজ্জ্বল ও অত্যন্ত সূক্ষ্ম যা মসলিন তৈরির জন্য আদর্শ।”
তাঁত বোর্ডের মসলিন পুনরুদ্ধার প্রকল্পের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এই গাছের দুষ্প্রাপ্যতা। অথচ একসময় মেঘনা-শীতলক্ষ্যা নদী ঘিরে ফুটি কার্পাসের ছিল ব্যাপক বিস্তার, এমনকি গাজীপুরের ‘কাপাসিয়া’ নামটিও এসেছে এই গাছের চাষ থেকে। ২০১৭ সালে স্থানীয় উদ্যোগে প্রচারণা চালানোর পর রাঙামাটি ও কাপাসিয়া গ্রাম থেকে মোট ৩৮টি ফুটি কার্পাসের গাছ সংগ্রহ করতে সক্ষম হন গবেষকেরা। ফলে বিলুপ্তির মুখে থাকা এই উদ্ভিদ এখন ফিরে এসেছে গবেষণার আওতায়।
তুলা গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা আ.ন.ম জহির উদ্দিন বলেন, “ফুটি কার্পাস সংরক্ষণ ও চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে মসলিন পুনরুদ্ধার কার্যক্রম আরও এগিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে গাছের বাণিজ্যিক চাষও সম্ভব হতে পারে।”
ফুটি কার্পাসের পুনর্জাগরণে শ্রীপুরের এই খামার এখন গবেষক ও ঐতিহ্যপ্রেমীদের নতুন আশার কেন্দ্রবিন্দু।
