টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
আধ্যাত্মিক সাধক, মানবতার দার্শনিক ও ফকির দর্শনের প্রবর্তক মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজির ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ আয়োজিত হয় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য ও হৃদয়গ্রাহী অনুষ্ঠান। সরকারি স্বীকৃতির অংশ হিসেবে সারাদেশের ন্যায় এই আয়োজনে আধ্যাত্মিকতা, সাম্য ও মানবতার মিলনমেলা বসে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ভোর থেকেই সাধুসংঘ প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে ভক্ত, বাউল, সাধু ও মানবতাবাদী দর্শনের অনুসারীদের পদচারণায়। পরিবেশ মুখরিত হয় লালনগীতি ও দেহতত্ত্বভিত্তিক বানীতে—যা ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসা, সাম্য ও মানবতার মর্মবাণী।
দিনব্যাপী এই আয়োজনে ছিল— সাধুদের খাবার ও হাত দোয়া, বৃক্ষরোপণ, আলোচনা সভা, আধ্যাত্মিক বক্তৃতা, মধ্যাহ্নভোজ এবং লালনসংগীত পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধুসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কালিহাতী শাখার সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক শাহ আলম। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি হরিমোহন পাল।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—
বুলবুল প্রকাশনীর মালিক বুলবুল হোসেন, উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান লেলিন, প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ইদ্রিস আলী, স্থানীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার সামসুল আলম ফকির, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাংবাদিক গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, কালিহাতী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দুলাল হোসেন রানা, সাংবাদিক আতোয়ার রহমান, সাংবাদিক শুভ্র মজুমদার ও স্থানীয় বিশিষ্ট সমাজসেবকগণ।
সাধুদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন: সাধু চানঁ মোহন, সাধু বনস্পতি মজুমদার, সাধু বিজন ভট্টাচার্য, সাধু দুলাল চন্দ্র সূত্রধর, সাধু আনোয়ার হোসেন চিশতী, সূরুজ আলী পীর, সাধু মতিয়ার রহমান, আব্দুর রহিম আজমেরি, সাইদ ফকির প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আল কামাল রতন মাস্টার।
বক্তারা বলেন,
“লালন সাঁইজি ছিলেন কেবল একজন সাধক নন, তিনি ছিলেন মানবতার স্থপতি। তার বাণী আজও সমাজে শান্তি, ভালোবাসা ও সাম্যের অনন্ত আলোকবর্তিকা।”
তারা আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ আজ সেই মানবতাবাদী দর্শন ও আধ্যাত্মিক ঐক্যের ধারক-বাহক হয়ে উঠেছে। সংগঠনটি নিয়মিতভাবে লালন দর্শনের চর্চা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।”
আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত সাধু-বাউল ও লালনভক্তদের মিলনে কেন্দ্রীয় সাধুসংঘ প্রাঙ্গণ পরিণত হয় এক মানবতার তীর্থস্থানে।
সন্ধ্যায় সমাপনী পর্বে লালন সাঁইজির অমর বাণী—
“মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”
ধ্বনিত হয় চারপাশে, ছড়িয়ে পড়ে আবেগ, ভক্তি ও আত্মিক শুদ্ধতার বার্তা।
এইভাবে শ্রদ্ধা, ভাবগাম্ভীর্য ও আধ্যাত্মিক আবেশে উদযাপিত হয় লালন সাঁইজির তিরোধান দিবস—যা প্রমাণ করে, মানবতার আলো আজও জ্বলছে টাঙ্গাইলের কেন্দ্রীয় সাধুসংঘের প্রদীপে।