বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৭, ২০২৫
No menu items!
বাড়িক্যাম্পাসজুলাই যোদ্ধাদের ছাড়াই জবিতে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন

জুলাই যোদ্ধাদের ছাড়াই জবিতে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন

২০২৪ সালের ঐতিহাসিক ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ বর্ষপূর্তি পালন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রশাসন। তবে অনুষ্ঠানে সেই আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা ও আহত শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ না জানানোয় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেছেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। পরবর্তীতে সবাইকে নিয়ে প্রোগ্রাম করবো।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায়  বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ মাঠে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শহীদ শিক্ষার্থী ইকরামুল হক সাজিদের মাতা মোছা. নাজমা খাতুন লিপি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেসব সংগঠন ও শিক্ষার্থী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আহত হয়েছেন কিংবা সামনের সারিতে থেকে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের পুরোপুরি উপেক্ষা করে এ আয়োজন করা হয়েছে। এতে আন্দোলনের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জুলাই আন্দোলনের জবি শাখার প্রধান সমন্বয়ক নূর নবী বলেন, ৪ আগস্টের আগে জবির হাতে গোনা ২-৩ জন শিক্ষক ছাত্রদের পাশে দাড়িয়েছে। ৫ আগস্টের পরে জবিতে সবচেয়ে বেশি আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন হয়েছে। কোনো শিক্ষক বিপ্লবী ছিলো না। বিপ্লবী ছিল শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরা। আজকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনে জুলাই যোদ্ধাদের বাদ দিয়ে অধিকাংশ আওয়ামীপন্থি  শিক্ষকদের নিয়ে এই প্রোগ্রাম করার মাধ্যমে সব বিপ্লবীদের অপমানিত করেছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জবি শাখার সভাপতি ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থী ইভান তাহসিব বলেন, “৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক পট পরিবর্তন হলেও বর্ষপূর্তি আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মতামত না নিয়ে একতরফাভাবে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। যারা রক্ত দিয়েছিলেন, তারাই আজ উপেক্ষিত।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের জবি শাখার সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, “আজ যেসব শিক্ষক ‘জুলাইয়ের চেতনা’ ধারণের কথা বলেন, তারা জানেন—হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকতেন, তাহলে তারাই হয়তো স্বৈরাচারের পক্ষেই দাঁড়াতেন। কিন্তু আমাদের জীবন? তা মুছে দিত সেই রাষ্ট্রযন্ত্র। এই আত্মবিস্মৃত প্রশাসনের প্রতি ধিক!”
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব শাহীন মিয়া বলেন, “যারা একসময় স্বৈরাচারী শাসনের পক্ষে ছিলেন, তাদের নিয়েই আজকের আয়োজন। প্রকৃত যোদ্ধাদের বাদ দিয়ে এই উদযাপন দুঃখজনক এবং অপমানজনক।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, “জুলাই আন্দোলনের মূল যোদ্ধাদের বাদ দিয়ে এমন আয়োজন প্রশাসনের দুর্বলতা ও গাফিলতির বহিঃপ্রকাশ। শুধু রাজনৈতিক সংগঠন নয়, সাধারণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরও জানানো হয়নি।”
ছাত্রদলের জবি শাখার আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “আমাদেরকে অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। সম্মুখসারির যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তি না থাকায় আমরা মর্মাহত।”
অনুষ্ঠান সঞ্চালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, তবে আমাদের ভুল হয়ে গেছে। পরবর্তীতে আমরা সবাইকে নিয়ে প্রোগ্রাম করবো। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম হিসেবে আমরা সকল প্রশাসনিক দপ্তর প্রধান ও বিভাগের প্রধানদের দাওয়াত দিয়েছি। তবে শিক্ষার্থীদের দাওয়াত দেয়ার ব্যাপারে আমাদের একটা কথা উঠেছিল। পরে আর হয়ে উঠেনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “আমরা একটি কমিটি গঠন করেছিলাম, যারা সবকিছু যাচাই-বাছাই করেছে। সবার অবদান মূল্যায়ন করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাস্তবতার ভিত্তিতেই অনুষ্ঠান হয়েছে। এ নিয়ে অতিরিক্ত বিতর্ক অনুচিত।”
তবে উপাচার্যের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও ত্যাগ স্বীকারকারীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ভাষ্য হচ্ছে,  “যারা রক্ত দিয়েছিলেন, তাদের বাদ দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো মানেই ইতিহাসকে অপমান করা। আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে উদযাপন না হয়ে, বরং তা যেন ইতিহাসের বিকৃতি ও ত্যাগের প্রতি অবহেলায় পরিণত হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ