ইমরুল হাসান বাবু,স্টাফ রিপোর্টার টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নিউ ধলেশ্বরী নদীতে বালুবাহী ভারী বাল্কহেড চলাচলের কারণে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। হাতিয়া, দশকিয়া, বালিয়াচড়া ও আনালিয়াবাড়ী গ্রামের অন্তত ৪০টি পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি ও জীবনের সঞ্চয়। এছাড়াও বহু বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সিরাজগঞ্জের সাত্তার কমিশনারের বালুমহাল থেকে প্রতিদিন শতাধিক বালুবাহী বাল্কহেড এই নদীপথে চলাচল করছে। ভারী এসব নৌযানের ঢেউয়ে নদীর দুই পাড়ে তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবছর অসংখ্য পরিবার ভাঙনের শিকার হলেও বালুব্যবসায়ীরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে জিওব্যাগ ফেলার মতো উদ্যোগ কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি।
চলতি বছরে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামের জুব্বার মুন্সি, আনোয়ার হোসেন, আলী, আষান আলী, শাহাদৎ, সাহেব আলী, বারেক, ফিরোজা, ছাত্তার, আবু বকর, গাজী, মিনহাজ, শাহ আলম, মাজেদ আলী, কোরবান আলীসহ বহু পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একইভাবে হাতিয়া গ্রামের মুজাম, মোকাদ্দেছ, আজাহার, নয়ান আলী, রাজ্জাক, শহিদ, রফিকুল, তুলা মিয়া প্রমুখসহ অগণিত মানুষ আজ নিঃস্ব। ক্ষতিগ্রস্তরা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা সম্প্রতি নিউ ধলেশ্বরী নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে প্রভাবশালী বালুব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, তাদের প্রভাবেই হাতিয়া, দশকিয়া ও বালিয়াচড়া গ্রামের যেসব ব্যবসায়ীর এলেঙ্গায় দোকান রয়েছে সেগুলো জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অন্তত ১২টি দোকান এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। এছাড়া হুমকি দেওয়া হয়েছে, এসব গ্রামের কাউকে এলেঙ্গায় দেখা গেলে গণপিটুনি দেওয়া হবে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভাঙনকবলিত মানুষেরা।
স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে ধলাটেংগর, পাথাইলকান্দি, এলেঙ্গা ও পৌলি এলাকার প্রায় ২০টি বালুঘাটে বালু পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এতে বালুব্যবসায়ীরাও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তবে নিরাপত্তার অভাবে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারছেন না।
এ বিষয়ে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম সরকার দোকান বন্ধের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত নই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”