সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) দেশের শিশুস্বাস্থ্যের একটি অন্যতম সফল উদ্যোগ হলেও, সম্প্রতি এই কর্মসূচিতে দেখা দিয়েছে টিকা সরবরাহজনিত মারাত্মক সংকট। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নিয়মিত টিকার সংকট অভিভাবকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে ৯ মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে রমনার একটি স্থায়ী টিকা কেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন এক অভিভাবক। তবে হাম-রুবেলা (এমআর) টিকা না থাকায় তাকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। শুধু রমনা নয়, বিভিন্ন এলাকায় একই অভিজ্ঞতা হয়েছে বহু পরিবারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইপিআই সূত্র জানায়, বর্তমানে পেন্টাভ্যালেন্ট (ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টঙ্কার, হেপাটাইটিস-বি ও হিব) এবং পিসিভি (নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া) টিকার সংকট সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, সিলেটসহ বেশ কিছু জেলায় এই সংকট দীর্ঘদিন ধরে চলমান।
কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন রেজা মো. সারোয়ার আকবর জানান, “টিকার সংকট আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে পেন্টাভ্যালেন্ট ও পিসিভি টিকার ঘাটতি এখনো রয়েছে।”
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ইপিআই কর্মসূচি চালুর আগে দেশে প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে মৃত্যু ছিল ১৫১ জন, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। এই সাফল্যের পেছনে ইপিআইয়ের অবদান অনস্বীকার্য।
বর্তমান সংকটের কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, আগের মতো অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) থেকে সরাসরি টিকা কেনা না হয়ে এখন তা রাজস্ব খাত থেকে কেনা হচ্ছে, যা একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। ফলে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণে বিলম্ব হচ্ছে।
তবে এ সংকট নিরসনে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ইপিআইয়ের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা নিয়মিত টিকার জন্য ব্যয় হবে। বাকি অর্থ দিয়ে হাজিদের টিকা, জলাতঙ্কের টিকা প্রভৃতি কেনা হবে।
ইতিমধ্যে দেশের ২০টিরও বেশি জেলায় নতুন চালানে টিকা পাঠানো হয়েছে। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন মো. নুর আলম দীন জানান, “তিন-চার দিন আগে চাহিদা অনুযায়ী সব টিকা পেয়েছি। এখন দেড় মাস নির্বিঘ্নে টিকাদান চলবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ইপিআই) মো. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, “এটি স্থায়ী সংকট নয়। কোথাও কোথাও ঘাটতি থাকলেও দ্রুত টিকা পাঠানো হচ্ছে। রাজস্ব খাতে কেনার ব্যবস্থাপনায় কিছুটা সময় লাগছে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, “টিকা এখন হাতে নেই, এমন নয়। কয়েকটি উপজেলায় ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে সংকট দেখা দিয়েছিল, যা ইতিমধ্যে সমাধান করা হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের টিকাদানে ঘাটতি জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সংকট নিরসনে দ্রুত ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।