শাহ আলম,টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে উল্টো চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন টাঙ্গাইলের এক সাংবাদিক। থানায় লিখিত অভিযোগ, হাতেনাতে মোটরসাইকেল উদ্ধার ও আসামি আটক হলেও রহস্যজনকভাবে ছিনতাইকারীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মধুপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ক্ষোভ, আতঙ্ক ও ন্যায়বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. আশিক।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমি একজন পেশাগত দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিক। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যদি আমার জীবন, সম্পদ ও নিরাপত্তা এভাবে হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কোথায় দাঁড়াবে?”
তিনি জানান, গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে মধুপুর উপজেলার গোপদ গ্রামের আলামিন হোসেন বাবু (পিতা—আব্দুর রশিদ)-এর বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার বরাবর দাখিল করেন। ওই অভিযোগের প্রতিশোধ হিসেবেই ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে মধুপুরে সংবাদ সংগ্রহে গেলে পরিকল্পিতভাবে তার মোটরসাইকেল ছিনতাই করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক মো. আশিক বলেন, বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে মধুপুর থানাধীন গোপদ এতিমখানা সংলগ্ন বিজয় ইটভাটার সামনে কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে আলামিন হোসেন বাবু জোরপূর্বক তার মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই তিনি মধুপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামিসহ ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ বিষয়ে এসআই আরিফুল তাকে ফোন করে মোটরসাইকেল উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রাত বেশি হওয়ায় পরদিন থানায় যাওয়ার কথা থাকলেও, পরদিন সকালে তিনি জানতে পারেন—কোনো দালিলিক প্রমাণ ছাড়াই একটি পাল্টা অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ আসামিকে ছেড়ে দিয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “মোটরসাইকেলসহ হাতেনাতে আটক হওয়া একজন অভিযুক্ত কীভাবে কোনো তদন্ত ছাড়াই মুক্তি পায়? তাহলে থানায় অভিযোগ দেওয়ার অর্থ কী? আইনের আশ্রয় নিলে কি অপরাধীরাই বেশি সুরক্ষা পাবে?”
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরও বলেন, এ ঘটনার পর তিনি ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আজ আমার মোটরসাইকেল গেছে, কাল যদি আমার জীবন যায়—তার দায় কে নেবে?”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, প্রকৃত ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে—যাতে ভবিষ্যতে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে ভয় না পায়।
মানবাধিকার ও সাংবাদিক নিরাপত্তার প্রশ্নে এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে সমাজে অপরাধীদের আরও উৎসাহ বাড়বে বলেও তিনি সতর্ক করেন। ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
