ভরা মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চলের নদী ও সাগরে ইলিশের সরবরাহ কমে গেছে। বরিশাল বিভাগে এ বছর ইলিশ আহরণ কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই–সেপ্টেম্বর সময়ে ৭৯ হাজার ৩১০ টন ইলিশ আহরণ হয়েছে। গত বছর একই সময়ে আহরণ হয়েছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৬৪৭ টন। এক বছরের ব্যবধানে আহরণ কমেছে ২৪ হাজার ৩৩৭ টন।
মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে ইলিশের সরবরাহ ছিল সীমিত। জেলেরা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মাছ ধরতে না পারায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সাধারণত এই সময়ে ইলিশের প্রাচুর্য দেখা গেলেও এবার সরবরাহ কম এবং দাম রীতিমতো নাগালের বাইরে।
মৎস্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় তথ্য অনুযায়ী, শুধু বরিশাল নয়—সারা দেশেই ইলিশ আহরণে হ্রাস দেখা গেছে। জুলাই ও আগস্ট মাসে আহরণ যথাক্রমে ৩৩.২০ ও ৪৭.৩১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৯৯৪ টনে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২২ হাজার ৯৪১ টন কম।
প্রতি বছর আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকে। এই সময়েই প্রায় ৮০ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের প্রবণতা বেড়েছে।
বিভাগীয় মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৩,৫৩১টি অভিযান চালানো হয়। এ সময় ১,৩৬৩টি মামলা ও ৮৯৩ জন জেলের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত বছর একই সময়ে মামলা হয়েছিল ১,০৫৭টি এবং দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন ৬৮১ জন। অর্থাৎ অভিযান বেড়েছে, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের হারও বেড়েছে।
ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, “ইলিশ উৎপাদন কমার দুটি প্রধান কারণ হলো নদী-মোহনায় নাব্য সংকট এবং অতিরিক্ত আহরণ। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে ভবিষ্যতে ইলিশ বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অক্টোবর মাসে মা ইলিশ নদীতে ডিম দেয়, পরে এপ্রিল-মে মাসে জাটকা সাগরে চলে যায়। কিন্তু মোহনায় জাটকা নিধন বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। নদীতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও সাগরে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলিশ সম্পদ টিকিয়ে রাখতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, নদী-মোহনায় জাটকা রক্ষায় বিশেষ অভিযান এবং মা ইলিশ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি কার্যকর করা গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।