বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২০, ২০২৫
No menu items!
বাড়িজাতীয়কালিহাতীতে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় চলছে ৪০টি অবৈধ বালু মহাল

কালিহাতীতে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় চলছে ৪০টি অবৈধ বালু মহাল

ইমরুল হাসান বাবু,স্টাফ রিপোর্টার টাঙ্গাইল:

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় সরকার অনুমোদিত কোনো বালু মহাল না থাকলেও রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রায় ৪০টি অবৈধ বালুঘাট চলছে—এমন অভিযোগে এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী, সল্লা ইউনিয়ন ও এলেঙ্গা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এসব বালুঘাট গড়ে উঠেছে, যা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দিব্যি চলছে।

সরেজমিনে যমুনা সেতু পূর্ব থানার থানাঘাট, শ্যামশৈল, বিনোদ লুহুরিয়া, সরাতৈল, বল্লভবাড়ী, বিয়ারা মারুয়া, জোকারচর, কদিম হামজানী, কামাক্ষ্যার মোড়, সল্লা চরপাড়া, ধলাটেংগর, ভাবলা, কুড়িঘরিয়া ও পৌলী এলাকায় চোখে পড়ে একের পর এক বালুর চাতাল। প্রতিটি ঘাটেই চলছে ড্রেজার, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও বালুবাহী ট্রাকের ব্যস্ত আনাগোনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ—
গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুস ছালাম ও তার সহযোগী রহমত উল্ল্যাহ বল্লভবাড়ী-বিয়ারা মারুয়া এলাকায় বালু উত্তোলন ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত।
টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার নাম ব্যবহার করে উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি পরিচয়ের সোলায়মান আকন্দ এবং ক্যাশিয়ার আব্দুল লতিফ আকন্দও একইভাবে অবৈধ বালু ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরাতৈল এলাকার মন্ডলবাড়ী বালুঘাট পরিচালনা করছেন ছাত্রদল পরিচয়দানকারী ইমরান হোসেন তালুকদার, কামরুল, যাদের সঙ্গে রয়েছেন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, নজরুল ইসলাম বিদ্যুত, এবং পটল এলাকার একজন স্কুল শিক্ষকসহ আরও কয়েকজন।

কামাক্ষ্যার মোড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিচালিত আরেকটি বালু মহাল স্থানীয়ভাবে কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজনু মিয়ার নামে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ধলাটেংগরে ‘বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ’ পরিচালনা করছেন খন্দকার আল আমিন। একই এলাকায় উছিম উদ্দিনের নামে আরেকটি বালুঘাটের পেছনে আলাল, মিনু, বাতেন, ফরহাদ সরকার, সোহেল, বাবুসহ আরও বহুজনের নাম উঠে এসেছে।
এছাড়া আসাদুজ্জামান আসাদ নামে এক ব্যক্তিও পরিচালনা করছেন একটি বালুঘাট।

বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ১০ ধারায় বলা আছে
ইজারা ছাড়া বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।সরকারি স্থানে বা জনসাধারণের রাস্তায় বালু স্তুপাকারে রাখা যাবে না
আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা না করেই চলছে ব্যবসা। ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক মহাসড়ক কৃষিজমি। ধুলাবালুর কারণে স্থানীয়দের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

কালিহাতী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন,ইমরান ও কামরুল ছাত্রদলের কেউ নয়।
কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজনু মিয়া দাবি করেন, আমি কোনো বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই।

এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম জানান,বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। অবৈধ বালু মহালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু অভিযান নয়,অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িতদের পরিচয় ও প্রভাব নির্বিশেষে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এলাকার পরিবেশ, সড়ক এবং জনজীবন নিরাপদ হবে না।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ