টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা বিএনপিতে তীব্র অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও মনোনয়ন–সংক্রান্ত ক্ষোভের জেরে সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি ও বহিষ্কৃত সভাপতিসহ ছয় নেতার গণপদত্যাগে স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে তাদের পদত্যাগের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
টাঙ্গাইল–৮ (বাসাইল–সখীপুর) সংসদ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করার অভিযোগ এনে নেতারা পদত্যাগ করেন বলে জানা গেছে।
পদত্যাগকারী ছয়জন হলেন—সখীপুর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাছেদ মাস্টার, সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান,উপজেলা বিএনপি’র বহিষ্কৃত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাজাহান সাজু,সদস্য আশরাফুল ইসলাম বাদল,গজারিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আব্দুর রউফ,বহুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ মিয়া
তারা ২১ থেকে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে পৃথক সময়ে পদত্যাগপত্র দেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের পদত্যাগপত্র ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
পদত্যাগপত্রে ছয় নেতাই একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। তারা লিখেছেন—
দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার সরকারের দমন–পীড়ন মোকাবিলা করে বিএনপির আদর্শ ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে মনোনীত প্রার্থী আহমেদ আযম খান আওয়ামী লীগপন্থী ব্যক্তিদের দলীয় কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন এবং সৎ নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করছেন।
এছাড়া অভিযোগ করা হয়—এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবাদ জানালে আহমেদ আযম খান নেতাকর্মীদের সঙ্গে “বিমাতাসুলভ ও অসদাচরণ” করেন, যা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি।
পদত্যাগপত্রের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের কাছে।
বাসাইল–সখীপুর বিএনপিতে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরেই চলমান। এর আগে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর সখীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাজাহান সাজুকে জেলা বিএনপি অব্যাহতি দিলে এতে আযম খানের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
সেই থেকেই ক্ষোভ আরও তীব্র হয়, যা এবার প্রকাশ্যে বিস্ফোরিত হয়েছে।
সম্প্রতি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল খালেক মণ্ডলকে হুমকি ও অশালীন ভাষায় কথা বলার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কয়েকটি উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা মানববন্ধন করেন।
এছাড়া বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে মন্তব্য এবং নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করায়ও আহমেদ আযম সমালোচনার মুখে পড়েন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাছেদ মাস্টার, সদ্য পদত্যাগ করা সাধারণ সম্পাদক বলেন,আহমেদ আযম খান জিয়ার আদর্শের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগের লোকদের পুনর্বাসন করছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে এ পর্যন্ত প্রায় ২০–৩০ জন পদত্যাগ করেছেন। শিগগিরই প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করবেন।
সখীপুর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজিম উদ্দিন মাস্টার বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন তবে কোনো মন্তব্য করতে চান না।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন,আমরা এখনো হাতে কোনো পদত্যাগপত্র পাইনি। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝির ফল। একজন জনপ্রিয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সব নেতাকর্মী আবার একসঙ্গে কাজ করবেন ইনশাআল্লাহ।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান অভিযোগ সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে বলেন,আমি কোনো দিন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করিনি, করবও না। অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কুচক্রী মহল জোর করে কিছু নেতার স্বাক্ষর নিয়েছে বলে শুনেছি।
তিনি দাবি করেন, অনেক নেতাকর্মী জোরপূর্বক স্বাক্ষর করলেও ধানের শীষের পক্ষে তার নেতৃত্বেই থাকবেন।
তিনি ‘ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন’ করে বাসাইল–সখীপুরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
