বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে চায় এবং ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের কমিটমেন্ট খুব পরিষ্কার— আমরা একটি স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে চাই এবং সেটি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকার পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণ দেয়, আমরা কমিশনের প্রতিবেদনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করব।” তবে গণমাধ্যম সংস্কার কার্যকর করতে হলে আন্তরিক ইচ্ছা ও মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার সময় দেশে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদপত্রের পরিবেশ তৈরি করেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে গণমাধ্যমের উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বক্তব্যে সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গত ১৫ বছরে অনেক সাংবাদিক ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করেছেন। সাংবাদিকদের নিজেদের স্বাধীন থাকার অঙ্গীকার থাকতে হবে। আপনারা নিজেরাই যখন দলীয় হয়ে পড়েন, তখন সমস্যার সৃষ্টি হয়।”
মতবিনিময় সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজেসি সভাপতি রেজোয়ানুল হক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্যসচিব ইলিয়াস হোসেন। প্রধান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাহী সদস্য মিলটন আনোয়ার। আলোচনায় অংশ নেন ট্রাস্টি তালাত মামুন ও ফাহিম আহমেদ।
অনুষ্ঠানের আয়োজন সহযোগিতা করে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন।
বিজেসির উপস্থাপিত আট দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—
সম্প্রচারমাধ্যমের জন্য পৃথক আইন,
স্বাধীন জাতীয় সম্প্রচার কমিশন,
টিভি চ্যানেলকে পে-চ্যানেল ঘোষণা,
সম্প্রচারমাধ্যমকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি,
সাংবাদিকদের কোড অব এথিকস,
টিভি লাইসেন্স নীতিমালা ও মালিকানা কাঠামো নির্ধারণ,
স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কর্তৃপক্ষ এবং ডিজিটাল সাংবাদিকতার নীতিমালা প্রণয়ন।
বিজেসি জানিয়েছে, গণমাধ্যম কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও তারা আশা করছে রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তাবগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করবে।
