বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫
No menu items!
বাড়িজাতীয়১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান, রাজধানীতে ঐতিহাসিক সংবর্ধনার প্রস্তুতি

১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান, রাজধানীতে ঐতিহাসিক সংবর্ধনার প্রস্তুতি

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁকে ঘিরে দলটির পক্ষ থেকে ‘ঐতিহাসিক ও রাজকীয় সংবর্ধনা’র আয়োজন করা হয়েছে। আজ বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তারেক রহমানের।

দেশে ফেরার পর রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। এ উপলক্ষে সেখানে বিশাল মঞ্চ নির্মাণসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিএনপি।
তারেক রহমান এমন এক সময় দেশে ফিরছেন, যখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একেবারে দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। দেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, তিনি চাইলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
দীর্ঘ সময় পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরছেন—এই খবরে বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। দুদিন আগ থেকেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। ঢাকামুখী জনস্রোত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শৃঙ্খলা কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেছে বিএনপি। ১০টি রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দেড় দশকের বেশি সময়ের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটছে। তাঁর সংবর্ধনায় লাখ লাখ মানুষের মহামিলন হবে।”
দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমান বুধবার দিবাগত রাতে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে যাত্রা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটে যাত্রা বিরতির পর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণের কথা রয়েছে।
বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এরপর সড়ক পথে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তিনি। যাওয়ার পথে ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। তারেক রহমানের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি, একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের অনুমতি এবং কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট—এই তিন জোনে ভাগ করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
সংবর্ধনা উপলক্ষে ৩০০ ফিট সড়কে ৪৮ ফুট দীর্ঘ ও ৩৬ ফুট প্রশস্ত একটি মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মাইক স্থাপন করা হয়েছে এবং পুরো এলাকা সিসিটিভি নজরদারিতে রাখা হবে।
তারেক রহমানের সঙ্গে দেশে ফিরছেন তাঁর সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা ও দলের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযাত্রী।
আগমনের পর শুক্রবার জিয়াউর রহমানের মাজার ও জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন তারেক রহমান। শনিবার নির্বাচন ভবনে ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং জুলাই আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে দেখা করতে পঙ্গু হাসপাতালে যাবেন। একই দিনে নিহত নেতা শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারতেরও কর্মসূচি রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তবে জাতীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলাবদ্ধ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে তা উল্টো প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ