রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ লোক এ হামলা শুরু করে।
রাত দেড়টা পর্যন্ত এ রিপোর্ট লেখা সময় ঘটনাস্থলে সেনাসদস্যদের উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যশৈন্যু মারমা জানান, হামলাকারীদের নিবৃত করতে পুলিশ কাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকশ লোক একত্রিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে পত্রিকা দুটির কার্যালয়ে হামলা চালায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া লাইভ ভিডিওতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের দৃশ্য দেখা যায়। হামলার সময় পত্রিকা দুটির কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় এবং কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ভেতরে আটকা পড়েন।
ডেইলি স্টারের সাংবাদিক রবিউল কমল ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে লেখেন, “আমার অফিস পুড়ছে। আমার কলিগরা ছাদে আটকে আছে। তারা ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতে পারছে না। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।”
হামলাকারীরা দাবি করেন, আততায়ীর গুলিতে আহত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় তারা এই হামলা চালিয়েছেন। তারা প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, শরিফ ওসমান হাদি বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সিঙ্গাপুরে তাঁর চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একই রাতে হাদির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও তাঁর মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পরিচিত মুখ শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার দুপুরে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে তাঁকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারী হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর সহযোগী হিসেবে মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখের নামও উঠে এসেছে। তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব ১৪ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ফয়সালের বাবা–মা, স্ত্রী, শ্যালকসহ কয়েকজন সহযোগী রয়েছেন।
এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘটনাটিকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, সামনে নির্বাচন ঘিরে গুপ্ত হামলা ও নাশকতা আরও বাড়তে পারে।
