সোমবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫
No menu items!
বাড়িজাতীয়শীতে থামছে না ডেঙ্গু: ডিসেম্বরেও প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে এডিস মশা

শীতে থামছে না ডেঙ্গু: ডিসেম্বরেও প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে এডিস মশা

শীতের মৌসুম শুরু হলেও ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও সংক্রমণ থামছে না। ডিসেম্বর মাসেও চোখ রাঙাচ্ছে এডিস মশাবাহিত এই রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশক নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু।

দেশের কীটতত্ত্ববিদরা আগেই সতর্ক করেছিলেন—ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি থাকলেও শীত শুরু হলে তা কমে আসে। তবে চলতি বছর সেই চিত্র ভিন্ন। এখনো প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে শত শত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন এবং প্রতিদিনই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত একদিনে ডেঙ্গুতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে গত দুই সপ্তাহে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪০৯ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে—১৯২ জন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মারা গেছেন ৬৮ জন। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ৫০ জন, চট্টগ্রামে ৩১ জন, ময়মনসিংহে ২৪ জন, রাজশাহীতে ২০ জন, খুলনায় ১৩ জন, ঢাকা বিভাগে ৯ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ জন ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কীটনাশক ছিটানো ছাড়া সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই। কীটতত্ত্ববিদদের দিয়ে দল গঠন করে এডিস মশার প্রজননস্থল শনাক্ত করা হচ্ছে না, লার্ভা ধ্বংস করা হচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গুও নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। মশা নিধন, ভাইরাস গবেষণা কিংবা পরিকল্পিত কর্মসূচি—কিছুই নেই। জলবায়ু পরিবর্তনও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এই অবস্থায় ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত থাকতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত একদিনে ডেঙ্গুতে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮৭ জন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৪০ জন, চট্টগ্রামে ৭১ জন, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ৮৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৩ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং নারী ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ১ লাখ ৪৭৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং নারী ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে বরিশাল বিভাগে—২১ হাজার ২৮৩ জন এবং সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে—৪১৫ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মৌসুমি বৈচিত্র্যের কারণে এখন সারা বছরই ডেঙ্গু হচ্ছে। ২০১৯ সালের মহামারির পর এটি মৌসুমি রোগ থেকে বাৎসরিক রোগে পরিণত হয়েছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে।
তিনি সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলেন, নিজ নিজ বাড়িঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে এডিস মশার প্রজনন না হয়। শিশুদের মশারির ভেতরে ঘুমানো নিশ্চিত করতে হবে এবং পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরাতে হবে। মশাবহুল এলাকায় গেলে মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

Notify of
guest
0 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ