ইমরুল হাসান বাবু, স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল:
একটু বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি, কষ্ট যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে ৬০ বছরের বৃদ্ধা ফজিলা বেগমের। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের এই অসহায় নারী বসবাস করছেন একটি জরাজীর্ণ টিনের ঘরে, যেখানে প্রতিটি বৃষ্টির দিন তার কাছে এক একটি দুঃস্বপ্ন।
মরিচা ধরা টিনের চাল থেকে টপটপ করে পড়ে পানি, ভাঙা বেড়া, পুরোনো কম্বল আর পলিথিন দিয়ে কোনোমতে ঠেকানো হয় প্রকৃতির নির্মমতা। এক কোণে বসে নিরবে সব সহ্য করেন ফজিলা বেগম, চোখে তার ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্ন নেই, শুধু বেঁচে থাকার অবিরাম সংগ্রাম।
১২ বছর আগে স্বামী ওমর ফারুক মারা যাওয়ার পর থেকে একাই চালিয়ে যাচ্ছেন সংসার। প্রতিবন্ধী ছেলে জুয়েল ও ১০ বছরের নাতনী জান্নাতই তার একমাত্র সঙ্গী। কিন্তু উপার্জনের কোনো উপায় না থাকায় চলছে অমানবিক জীবনযুদ্ধ। এরই মধ্যে দুই ছেলের মৃত্যু (একজন ৫ বছর আগে, আরেকজন ৪ বছর আগে) যেন তার জীবনে আরও অন্ধকার নামিয়ে এনেছে।
কান্নাভেজা কণ্ঠে ফজিলা বেগম বলেন,”২২ বছর ধরে স্বামীর রেখে যাওয়া একমাত্র ঘরেই আছি। এখন এ ঘরটাও ভেঙে পড়ছে। বৃষ্টি এলেই ঘরে পানি পড়ে। মানুষ দিলে খাই, না দিলে উপোস। শেষ বয়সে যদি একটা ঘর পেতাম, শান্তিতে মরতে পারতাম।
সম্প্রতি (৩১ আগস্ট) রাতে চুরির শিকার হয়েছেন তিনি। ঘরের সামান্য কিছু চাল ও একটি মোবাইল চুরি হয়ে গেছে। মানুষ থেকে চেয়ে পাওয়া চালই ছিল তার একমাত্র সম্বল। এখন খাবার কীভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
স্থানীয়দের মতে, শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও যদি সহযোগিতার হাত বাড়ায়, তবে অন্তত জীবনের শেষ প্রহরগুলো শান্তিতে কাটাতে পারবেন এই সংগ্রামী নারী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন সিকদার বলেন,
“ফজিলা বেগম খুবই অসহায়। বর্ষা বা শীত,কোনো সময়ই এই ভাঙা ঘরে থাকা সম্ভব নয়। সরকারি সহায়তা পেলে তিনি একটি ভালো ঘরে থাকতে পারবেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান,
“তার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত তাকে বিধবা ভাতার আওতায় আনা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল রনী বলেন,”বৃদ্ধা ফজিলা বেগমের জন্য থাকার ঘর নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”