জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা বলেছি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের একটি দাবি ছিল এবং সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছিল ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সেটি হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাতে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হয়, সে বিষয়ে আমরা আহ্বান জানিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
‘জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ধীর গতিতে এগোচ্ছে। গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর থেকে যে সঞ্চয়পত্র দেওয়ার কথা ছিল, সেটি এখনো সব শহীদ পরিবার পায়নি। মাসিক ভাতা দেওয়ার কথা ছিল, সেটি এখনো শুরু হয়নি। আমরা বলেছি, যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিশ্রুত দাবি আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসন যাতে নিশ্চিত করা হয়,’ যোগ করেন তিনি।
‘আমরা সমন্বিতভাবে তিনটি বিষয়ে একত্রে রোডম্যাপ চেয়েছি—জুলাই গণহত্যার বিচার, সংস্কার বা জুলাই সনদ এবং গণপরিষদ বা আইন সভার নির্বাচন।শনিবার দিবাগত রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, ‘আজকের আলোচনায় আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছি। অনুরোধ জানিয়েছি, গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় উনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, সেই দায়িত্ব সম্পন্ন করেই যাতে উনি সিদ্ধান্ত নেন যেকোনো বিষয়ে।
নাহিদ আরও বলেন, ‘তৃতীয় বিষয় হলো, শেখ হাসিনার আমলে হওয়া জাতীয় ও স্থানীয় সব নির্বাচনকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে অবৈধ ঘোষণা করতে বলেছি। কারণ সে সময় শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থায় ইলেকশন করেছিলেন এবং মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছিলেন। রাতে ভোট হয়েছে, ডামি প্রার্থীর ভোট হয়েছে। ফলে সেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এবং সে সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময় প্রত্যাখ্যান করেছে।
‘সেই নির্বাচনগুলো আবার আদালতে নিয়ে গিয়ে এক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। সেই বিশৃঙ্খলা এড়াতে পূর্বের নির্বাচনগুলোকে আইনগতভাবে যাতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। চতুর্থ বিষয়ে আমরা বলেছি, এই ইলেকশন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না রাজনৈতিক দল হিসেবে। ইলেকশন কমিশন পুনর্গঠন করে যাতে দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। মানুষ সেবা পাচ্ছে না, এতে নাগরিক সেবা নিশ্চিত হবে,’ বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, ‘সর্বশেষ আমরা বলেছি, জুলাই গণহত্যার বিচার এবং সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান; জুলাই সনদ ঘোষণা হওয়ার কথা, আমরা নির্বাচনের কথা বলছি, গণপরিষদ ও আইন সভা নির্বাচন—এই তিনটির সমন্বিত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ যাতে সরকার ঘোষণা করে। জুলাই মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ আসবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি ছাত্র উপদেষ্টা যারা রয়েছেন, তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি আকারে সরকারে গিয়েছিলেন, সরকারকে বৈধতা দিয়েছেন। ফলে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো দলের বা এনসিপির সম্পর্ক নেই সেটা আজকে আমরা পরিষ্কার করেছি।
তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি আকারে তারা গিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করছেন অন্যান্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে, সেখানে তাদের হেয় করা, অপমান করার বিষয়ে আমরা নিন্দা জানিয়েছি। আমাদের সঙ্গে তাদের জড়িয়ে, ট্যাগ দিয়ে পদত্যাগ করতে বলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক।’
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ইস্যুকে কেন্দ্র করে আজকে রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকা হয়েছে, এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে অন্য দলগুলো বেশি আগ্রহী, সেটাতে আপনাদের অবস্থান কী—গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, ‘আমরা বলেছি, উনি যাতে দায়িত্বে থাকেন, দায়িত্বে থেকে রাজনৈতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষের সব সমস্যার সমাধান করেন।’
‘কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং জনগণ এবং গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা, তাদের আহ্বানে তিনি দায়িত্বে এসেছেন এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য তিনি কমিটেড, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি উনি কমিটেড নন। এই বিষয়টি যেন উনি বিবেচনা করেন যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে উনি কাজ করতে পারছেন না বা উনি দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন কি না এই বিষয়ে উনার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এটা ইতোমধ্যে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে।’
‘সরকার প্রধান হতাশা ব্যক্ত করেছেন, কারণ যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে উনি দায়িত্বে এসেছেন এবং সে সময় আমরা যেহেতু আন্দোলনের প্রতিনিধি ছিলাম, আমরাই উনাকে আহ্বান করেছিলাম গণঅভ্যুত্থান পরিবর্তী একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য। শুধু ড. মুহাম্মদ ইউনূস বা এই সরকার নয়, সেই সময় যারা আমরা আন্দোলন করেছিলাম, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা—সবাই কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি জনগণের কাছে ব্যক্ত করেছি যে, একটি নতুন বাংলাদেশ এবং সংস্কারের মধ্য দিয়েই একটি নতুন বাংলাদেশ পাওয়া সম্ভব। সেই নতুন বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি থেকে কোনো কোনো পক্ষ সরে আসছে বলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মনে হচ্ছে এবং উনাকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন দাবি আদায়ের চেষ্টা চলছে। এর ফলে এভাবে উনার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় এবং সংস্কার বা পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সেই জায়গায় উনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন,’ আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন নাহিদ।