মঙ্গলবার, জুলাই ১৫, ২০২৫
No menu items!
বাড়িঅপরাধনারান্দিয়া ভূমি অফিসে ঘুষ না দিলে হয়রানির শিকার অভিযোগ সেবাগ্রহীতাদের

নারান্দিয়া ভূমি অফিসে ঘুষ না দিলে হয়রানির শিকার অভিযোগ সেবাগ্রহীতাদের

ইমরুল হাসান বাবু,স্টাফ রিপোর্টার টাঙ্গাইল:

টাঙ্গাইলের  কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের ভূমি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর রনির বিরুদ্ধে ঘুষ, হয়রানি ও নথি জালিয়াতিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। তার অনিয়মের কারণে সাধারণ জনগণ সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, নামজারি, খতিয়ান সংশোধন বা ভূূমি সংক্রান্ত অন্যান্য সেবা নিতে গেলে ওই অপারেটর নির্দিষ্ট হারে ‘চা-নাস্তার টাকা’ দাবি করেন। সরকারি ফি জমা দেওয়ার পরেও কাজ করতে অযথা সময়ক্ষেপণ এবং নথিপত্রে ত্রæটি দেখিয়ে মানুষকে বারবার ঘুরানো হয়। কেউ ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে হয়রানি করা হয় অথবা কাগজপত্র হারিয়ে গেছে বলে দাবি করা হয়।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, কম্পিউটার অপারেটর নিজের পছন্দের দালালদের মাধ্যমে কাজ করাতে মানুষকে বাধ্য করেন। এতে সাধারণ মানুষের অতিরিক্ত খরচ ও হয়রানি বাড়ছে। এলাকাবাসী জানান, একাধিকবার মৌখিকভাবে অভিযোগ করা হলেও কোনো প্রাতকার মেলেনি। বরং অভিযোগকারীদের হুমকি-ধামকির মুখে পড়তে হয়েছে।
স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একের পর এক অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ তেমন ব্যবস্থা নেয় না। এতে ওই অপারেটর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি, দুর্নীতিগ্রস্ত কম্পিউটার অপারেটর রনির অপকর্ম দ্রæত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক, যাতে সরকারি সেবা সহজ ও স্বচ্ছ হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নারান্দিয়া ভূমি অফিসে মহি উদ্দিন নামে এক সেবা গ্রহীতা আসছে খারিজ নিতে। কম্পিউটার অপারেটর রনিকে জিজ্ঞেস করতে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন। কি জন্য সেবা গ্রহীতার সাথে খারাপ ব্যবহার করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,খারিজের টাকা নায়েব সাবের কাছে দিছে,নায়েব সাবের কাছে গিয়েই জিজ্ঞেস করুক। আমার কাছে টাকা দেয় নাই, এজন্য আমাকে বিরক্ত করতে পারবে না। এমন কথার অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। দেখামিলে আরও অনেক সেবা গ্রহীতার-নায়েব সাব অফিসে না থাকায় তারা ফিরে যাচ্ছে। কেউ-কেউ কম্পিউটার রনিকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কাজ করে নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় নেতাদের সাথে সখ্যতা রেখে কম্পিউটার অপারেটর রনি নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। ওই অফিসে তিনি কম্পিউটার অপারেটর হলেও স্থানীয় হওয়ায় বেশ দাপটের সাথে চলাফেরা করেন তিনি। এছাড়াও অফিসের কর্মচারীরা তাকে দেখে তটস্থ থাকে। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে রাস্তায় ওই দলীয় লোকদের দিয়ে হেনস্তা করে। এছাড়াও সম্প্রতি তার ঘুষ চাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েন। সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। পরে সে স্থানীয় নেতাদের ফোন করে অফিসে নিয়ে আসে তার অপকর্ম ঢাকতে। কিছুতেই কাজ না হলে তিনি কৌশলে অফিস থেকে সটকে পড়েন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ওই অফিসের ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা উম্মে মাসুমা দেওয়ানের পশ্রয়ে তিনি এমন বেপরোয়া হয়েছেন। উম্মে মাসুমা নিজে টাকা হাতে না নিলেও কম্পিউটার অপারেটর রনিকে দিয়ে টাকা নেন। ভুক্তভোগী নারান্দিয়া পশ্চিম পাড়ার জাকির হোসেন,ব্যবসায়ী বাদশা ,মাইস্তা গ্রামের জায়েদ তালুকদারসহ অনেকেই জানান, তারা খারিজ করতে কেউ ১০ হাজার কেউ ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। কয়েকমাস অতিবাহিত হলেও তারা খারিজ পাচ্ছেনা। তাগিদ দিলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়।
অভিযুক্ত নারান্দিয়া ভুমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা উম্মে মাসুমা দেওয়ানের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ট্রেনিংয়ে আছি মঙ্গলবারে আপনারা আসেন।
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) মোহাম্মদ সিফাত বিন সাদেক জানান, নারান্দিয়া ভুমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতোপুর্বেও একটি ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ